পাঠ ৫ - আল-আসমাউল হুসনা




পাঠ ৫ 
আল-আসমাউল হুসনা

আসমাউল হুসনা আরবি শব্দ। আসমা শব্দের অর্থ নামসমূহ। আর হুসনা অর্থ সুন্দরতম। অতএব, আসমাউল হুসনা অর্থ সুন্দরতম নামসমূহ। আল্লাহ তায়ালার সুন্দর সুন্দর নামকে একত্রে আসমাউল হুসনা বলা হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন,


অর্থ: “আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব, তােমরা তাঁকে সেই সব নামেই ডাকবে।” (সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ১৮০)

আল্লাহ তায়ালা সকল গুণের আধার। যেমন: তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা, ক্ষমাশীল, দয়াবান, ধৈর্যশীল, সর্বজ্ঞ, সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান, প্রতিপালক ইত্যাদি। এমন কোনাে গুণ নেই যা তাঁর মধ্যে নেই। এসব গুণের প্রত্যেকটির পৃথক পৃথক নাম রয়েছে। এগুলাে হলাে গুণবাচক নাম। গুণবাচক এসব নামই আসমাউল হুসনা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাকের অনেক গুণবাচক নামের উল্লেখ আছে। আম, পাকের ৯৯টি (নিরানব্বইটি) গুণবাচক নামের কথা জানি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, মহান আল্লাহর গুণবাচক নামের কোনাে শেষ নেই। এগুলাে অসংখ্য। তবে বেশি উল্লেখযােগ্য হলাে এ নিরানব্বইটি নাম।

এসব নাম আল্লাহ তায়ালার পরিচয় প্রকাশ করে। যেমন: আল্লাহু খালিক। খালিক অর্থ সৃষ্টিকর্তা বা স্রষ্টা। সুতরাং আমরা এ নাম দ্বারা বুঝতে পারি যে, এ বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা হলেন মহান আল্লাহ। এভাবে গুণবাচক নামসমূহ দ্বারা আমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভালােভাবে চিনতে পারি । ফলে তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে। চলা সহজ হয়। আল্লাহ তায়ালার এসব গুণ আমরা অনুশীলন করব। এতে আমাদের চরিত্র সুন্দর হবে। সকলেই আমাদের ভালােবাসবে। আল্লাহ তায়ালাও আমাদের ভালােবাসবেন।

আল্লাহু মালিক  - আল্লাহ তায়ালা সকল কিছুর মালিক। মালিক অর্থ অধিকারী। তিনি আসমান-জমিন, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, গাছপালা, নদী-সাগর সবকিছুর অধিপতি। সকল কিছুই তাঁর নির্দেশে পরিচালিত হয়। কোনাে কিছুই তাঁর আদেশ লঙ্ঘন করে না। পশু-পাখি, কীটপতঙ্গের মালিকও তিনিই। পৃথিবীতে বড়-ছােট সকল বস্তুই তার মালিকানার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তায়ালা মানুষেরও মালিক। আমাদের জীবন-মৃত্যু তাঁরই নিয়ন্ত্রণে। আমাদের ধন-সম্পদ, সােনা-রুপা সবকিছুর প্রকৃত মালিকও তিনিই। পৃথিবীতে আমরা তাঁর প্রতিনিধি। এ হিসেবে আমরা ধন-সম্পদের আমানতদার মাত্র। আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত ও পরকালের মালিক। জান্নাত-জাহান্নাম তাঁরই অধিকারে। শেষ বিচারের দিনের মালিকও তিনিই। এক কথায় বিশ্বজগতে যা কিছু আছে সবকিছুরই মালিক হলেন মহান আল্লাহ।

আল্লাহ্ করিম - করিম আরবি শব্দ। এর অর্থ দয়াময়, মহানুভব, উদার ইত্যাদি। আল্লাহ তায়ালা অতীব মহান, করুণাময় । উদারতা, ও দয়া, মায়া, স্নেহ, সহনশীলতা, ঔদার্য, ক্ষমা ইত্যাদি গুণাবলি পরিপূর্ণভাবে তাঁর সত্তায় বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ অসীম তাই তাঁর মায়া, ক্ষমা, সহনশীলতা ইত্যাদি সীমাহীন। আমাদের কেউ কাউকে দয়া দেখালে, ক্ষমা করলে, আমরা ঐ ব্যক্তিকে কতােইনা মহান ভাবি। আদর্শবান ব্যক্তি হিসেবে তার গুণগান করি। কিন্তু মহান আল্লাহ যে কতাে বড় দয়াময়, উদার, ক্ষমাশীল তা আমরা অনুমানও করতে পারি না। কেননা তিনি তাে মহামহিম অসীম সত্তার অধিকারী। তিনি সকল সৃষ্টির প্রতিই উদার ও মহানুভব। আলাে, বাতাস, পানি, চন্দ্র, সূর্য, জীবজন্তু, পাহাড়-নদী, আসমান, জমিন সবই আল্লাহর নিয়ামত। বিনিময় প্রত্যাশা ছাড়া উদারভাবে অকাতরে তিনি সকলের প্রতি নিয়ামত বিতরণ করেন। তাঁর মহানুভবতার কোনাে সীমা নেই। তার এ অসীম এবং অফুরন্ত দয়া, মায়া ও উদারতার জন্য সকলকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত, শােকর আদায় করা উচিত।

মহান আল্লাহর গুণবাচক নামের অনুসরণে আমরাও অন্যের প্রতি উদার ও দয়াপূর্ণ আচরণ করব। কথায়, কাজে বাস্তব জীবনে মহানুভব হবে।

আল্লাহু আলিম - আলিম আরবি শব্দ। এর অর্থ সর্বজ্ঞ অর্থাৎ যিনি সবকিছু জানেন বা যিনি সকল জ্ঞানের অধিকারী। আল্লাহ তায়ালা হলেন আলিম। তিনি সকল জ্ঞানের আধার, তার জ্ঞান অসীম। তাঁর জ্ঞানের পরিমাপ করা যায় না। কোনাে কিছুই তার জ্ঞানের বাইরে নয়। তিনি আসমান-জমিনের সবকিছুর খবরই জানেন। আমাদের সকল কথাবার্তা, কাজকর্ম তিনি জানেন । এমনকি আমরা অন্তরে যা চিন্তা করি তিনি সেগুলােও জানেন । আমরা যা কল্পনা করি বা স্বপ্ন দেখি সেগুলােও তার জানার বাইরে নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন-
অর্থ : “অন্তরে যা আছে আল্লাহ সে সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত।” (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত : ১৫৪) আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান সীমাহীন। তাঁর জ্ঞানকে কেউই ফাঁকি দিতে পারে না। ক্ষুদ্র পিপীলিকার সমস্ত খবরও তাঁর জানা। সমুদ্রের তলদেশে কিংবা মহাশূন্যে কোথায় কী হচ্ছে সবই তিনি জানেন। মােটকথা সবই তাঁর জ্ঞানের আওতাধীন। সুতরাং আমরা সবসময় এ কথা মনে রাখব। আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন এমন কোনাে কাজ করব না।

আল্লাহু হাকিম - হাকিম আরবি শব্দ। এর অর্থ প্রজ্ঞাময়, হিকমতের অধিকারী, সুবিজ্ঞ, সুনিপুণ কর্মদক্ষ । মহান আল্লাহর গুণবাচক নাম হিসেবে হাকিম অর্থ আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়, সুদক্ষ, সুনিপুণ ও হিকমতের মালিক। এই মহাবিশ্ব তিনি যেমন সর্বোত্তম দক্ষতার সাথে সৃজন করেছেন, তেমন মহা প্রজ্ঞা, সুনিপুণ ও সুদক্ষ কৌশলের সাথে আবহমানকাল থেকে পরিচালনা করছেন। আকাশের তারকারাজি, চন্দ্র, সূর্য, মেঘমালা, নদ-নদী, আলাে-বাতাস, আগুন-পানি, ফুল-ফল, বৃক্ষ-লতা, আসমান-জমিন, জীবন-মরণ, স্বাদ-গন্ধ ও রূপ-রস যে দিকেই আমরা তাকাই সর্বত্রই এক সুন্দর সুনিপুণ কৌশল দেখতে পাই। তাইতাে মহান আল্লাহ বলেন, “যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সপ্তাকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোনাে খুঁত দেখতে পাবে না; তুমি আবার তাকিয়ে দেখ, কোনাে ত্রুটি দেখতে পাও কি?” (সূরা আল-মুল্ক, আয়াত:৩)

মহান আল্লাহর মহা প্রজ্ঞার নিদর্শন দেখে আমরা তাঁর প্রতি সুদৃঢ় ইমান আনব, শ্রদ্ধায় বিনম্রভাবে তাকে স্মরণ করব। সমগ্র সৃষ্টিকুলের মধ্যে যে প্রজ্ঞা ও হিকমত বিদ্যমান তা উপলব্ধি করে নিজেরা চিন্তাশীল হবাে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চায় উৎসাহী হবাে। খাঁটি ইমানদার হওয়ার পাশাপাশি অনুসন্ধিৎসু বিজ্ঞানমনস্ক হবাে। আমাদের লেখাপড়া ও দৈনন্দিন কাজকর্ম গুছিয়ে সুশৃঙ্খল-সুনিপুণভাবে সময়ানুবর্তী হয়ে সমাপন করতে চেষ্টা করব। তাতে আমাদের জীবন সার্থক ও সফল হবে।

কাজ : শিক্ষার্থীরা আল্লাহর চারটি গুণবাচক নাম উল্লেখ করে প্রত্যেকটির একটি করে শিক্ষা লিখে শ্রেণি শিক্ষককে দেখাবে।

Post a Comment

0 Comments