পাঠ ৬ - রিসালাত




পাঠ ৬
রিসালাত 

রিসালাত শব্দটি আরবি। এর অর্থ বার্তা, খবর, চিঠি বা সংবাদ বহন। রাসুলগণ যে কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করেন তাকে বলা হয় রিসালাত। আল্লাহ তায়ালা নবি-রাসুলগণকে নানা দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। যেমন :মানুষকে আল্লাহ তায়ালার দিকে আহ্বান করা, সত্য দীন প্রচার করা, সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা, মহান আল্লাহর বাণী পৌছে দেওয়া ইত্যাদি। রাসুলগণের এ সকল দায়িত্বকে এক কথায় রিসালাত বলা হয়। ইসলামি আকিদায় তাওহিদের পরই রিসালাতের স্থান। এক্ষেত্রে নবুয়ত ও রিসালাত প্রায় সমার্থক।

নবি-রাসুলগণের পরিচয় -  নবি-রাসুলগণ হলেন মহান আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ বা মনােনীত বান্দা। নবুয়ত ও রিসালাতের দায়িত্ব। পালনের জন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁদের নির্বাচিত করেছেন। যিনি নবুয়তের দায়িত্ব পালন করেন তিনি হলেন নবি। আর রিসালাতের দায়িত্ব পালনকারীকে বলা হয় রাসুল।

নবি-রাসুলগণ আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও প্রেরিত পুরুষ। তাঁরা কেউ আল্লাহর অংশ বা আল্লাহ তায়ালার পুত্র ছিলেন না। বরং মানুষের মধ্য থেকেই আল্লাহ পাক তাদের নির্বাচন করেছেন। তারা বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। তারা মাসুম বা নিস্পাপ ছিলেন। তারা সর্বদা নেক ও ভালাে কাজ করতেন। অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকতেন। তাঁরা উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।

নবি-রাসুলগণ মানুষের নিকট আল্লাহ তায়ালার পরিচয় তুলে ধরেন। তাঁরা মানুষকে মহান আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিতেন। মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের শিক্ষা দিতেন। তারা মানুষের নিকট আল্লাহ তায়ালার বাণী ও বিধান পৌছে দিতেন। আল্লাহ পাকের আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে মানুষকে হাতে-কলমে শিক্ষা দিতেন। তারা সবসময় মানুষের কল্যাণ কামনা করতেন।

নবি ও রাসুলগণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যাদের নিকট আসমানি কিতাব এসেছিল তাঁরা ছিলেন রাসুল। আর যাঁদের নিকট কোনাে আসমানি কিতাব আসেনি তাঁরা হলেন নবি। নবিরা পূর্ববর্তী রাসুলের প্রচারিত দীন (ধর্ম) প্রচার করতেন। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে অনেক নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। পৃথিবীর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যই নবি-রাসুল এসেছেন। একমতে, তাদের সংখ্যা সর্বমােট এক লক্ষ চব্বিশ হাজার । অন্যমতে,তাদের সংখ্যা ছিল দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার। তন্মধ্যে মাত্র ৩১৩ (তিনশত তেরাে) জন ছিলেন রাসুল। (মিশকাত: বাব-বাদউল খালক ওয়া জিকরিল আম্বিয়া)। অতএব, বােঝা যায় প্রত্যেক রাসুলই নবি ছিলেন, কিন্তু প্রত্যেক নবি রাসুল ছিলেন না। সর্বপ্রথম নবি ছিলেন হযরত আদম (আ.)। আর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবি ও রাসুল আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)। তাঁর পর দুনিয়াতে আর কোনাে নবি আসেননি, আসবেনও না।

নবি-রাসুল প্রেরণের প্রয়ােজনীয়তা

মহান আল্লাহ নানা কারণে মানুষের মধ্যে নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন। নিম্নে এর কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলাে :
• নবি-রাসুলগণ মানুষকে আল্লাহ পাকের পরিচয় জানিয়েছেন।
• তাঁরা আমাদের আল্লাহ তায়ালা ও সত্য দীনের প্রতি আহবান করতেন।
• ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় ইত্যাদির পার্থক্য নবি-রাসুলগণই শিক্ষা দিতেন।
• তারা মানুষকে উন্নত ও উত্তম চরিত্রের শিক্ষা দিতেন।
• তারা জান্নাতে যাওয়ার পথ নির্দেশ প্রদান করতেন। কীভাবে জাহান্নামের শাস্তি থেকে বেঁচে থাকা যায় সে শিক্ষা দিতেন।
• তাঁরা মানুষের নিকট আসমানি কিতাবসমূহের বাণী পৌঁছে দিতেন।
• হাতে-কলমে মানুষকে আল্লাহ তায়ালার বিধান শিক্ষা দিতেন।

রিসালাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব রিসালাতে বিশ্বাস করার গুরুত্ব অপরিসীম। তাওহিদের পরই রিসালাতের স্থান। রিসালাতে অর্থাৎ নবি রাসুলগণকে বিশ্বাস না করলে কেউ মুমিন হতে পারে না। কেননা নবি-রাসুলগণই আমাদের আল্লাহ তায়ালার পরিচয় জানিয়েছেন। তার বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁদের বিশ্বাস না করলে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর বাণীকে অস্বীকার করা হয়। অতএব, ইমানের অন্যতম অঙ্গ হচ্ছে রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। নবি-রাসুলগণ ছিলেন আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা ও প্রেরিত মানব। মানুষের হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁদের প্রেরণ করেছেন। মহান আল্লাহর প্রেরিত সব নবি-রাসুলের প্রতি আমরা ইমান আনব। তাঁদের আনীত বাণীকে সম্মান করব। আর সর্বশেষ নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর দেখানাে পথে আমাদের জীবন পরিচালনা করব।

কাজ : শিক্ষার্থীরা নবি-রাসুল প্রেরণের প্রয়ােজনীয়তা খাতায় লিখে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষককে দেখাবে । |

Post a Comment

0 Comments