দেহতত্ত্ব ও শরীরতত্ত্ব সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান


দেহতত্ত্ব বা এনাটমি (Anatomy) হলাে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গঠন সম্পর্কে জ্ঞান। সামগ্রিক দেহতত্ত্ব (Gross Anatomy) হলাে মানবদেহের গঠন সম্পর্কে জ্ঞান যা খালি চোখে দেখা যায়। খানিক দেহতত্ত্ব (Regional Anatomy) হলাে মানবদেহের এক একটি অংশ বা স্থানের বিভিন্ন অংশের বর্ননা। যেমন- মাথা ও গলা (Head-Neck), উক্ষাঙ্গ (Upper Limb), নিম্নাঙ্গ (Lower Limb) ইত্যাদি। তীয় দেহতত্ব (Systemic Anatomy) হলাে মানবদেহের এক একটি তন্ত্রের গঠন সম্পর্কে জ্ঞান। যেমন - সনত (Respiratory System), পরিপাকতন্ত্র (Digestive System) ইত্যাদি। 

আণুবীক্ষণিক দেহতত্ত্ব (Microscopic Anatomy) হলাে মানবদেহের ক্ষুদ্র অঙ্গসমূহের গঠন যা অণুবীক্ষণ যন্ত্র (Microscopic) এর সাহায্যে দেখা যায়। যেমন- কোষের গঠন, কলার গঠন প্রভৃতি। সাধারণ শরীরতত্ত্ব (General Physiology) হলাে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও জীব কোষের মৌলিক গঠন, উৎপত্তি, বৃদ্ধি সংক্রান্ত ভৌতিক ও রাসায়নিক উপাদান সম্পর্কে জ্ঞান। শরীরতত্ত্ব বা হিউম্যান ফিজিওলজি (Human Physiology) হলাে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যপ্রণালি সম্পর্কে ইরান। অস্থি বিদ্যা (Osteology) হলাে হাড় (Bone) সম্পর্কে জ্ঞান। যেমন- হিউমেরাস, ফিমার, রেডিয়াস ও আলনা, টিবিয়া, ফিবুলা, কশেরুকা ইত্যাদি। 

সন্ধি বিদ্যা (Arthrology) হলাে মানবদেহের বিভিন্ন সন্ধি (Joint) সম্পর্কে জ্ঞান। যেমন- ফদ্ধ সন্ধি (Shoulder Joint), জঙ্ঘা সন্ধি (Hip Joint), কনুই সন্ধি (Elbow Joint) ইত্যাদি। পেশি বিদ্যা (Myology) হলাে পেশি (Muscle) সম্পর্কে জ্ঞান। যেমন- বাহুর পেশি:-ডেলটয়েড (Deitoid), বাইসেপস্ (Biceps) হৃদপেশি (Cardiac Muscle) ইত্যাদি। 


  1. রক্তরােগ বিদ্যা (Haematology) হলাে রক্তরােগ সম্পর্কে জ্ঞান। 
  2. যকৃতরােগ বিদ্যা (Hepatology) হলাে যকৃতের রােগ সম্পর্কে জ্ঞান। 
  3. চর্মরােগ বিদ্যা (Dermatology) হলাে চর্মরােগ সম্পর্কে জ্ঞান। 
  4. স্নায়ুরােগ বিদ্যা (Neurology) হলাে স্নায়ুরােগ সম্পর্কে জ্ঞান। 
  5. হৃদরােগ বিদ্যা (Cardiology) হলাে হৃদরােগ সম্পর্কে জ্ঞান। 
  6. স্ত্রীরােগ বিদ্যা (Gynaecology) হলাে স্ত্রীরােগ সম্পর্কে জ্ঞান। 
  7. মূত্ররােগ বিদ্যা (Urology) হলাে মূত্র ও মূত্ররােগ সম্পর্কে জ্ঞান। 

দেহতত্ত্ব বা এনাটমিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন শব্দাবলি 

দৈহিক অবস্থা (Anatomical Position) ঃ একজন মানুষ সােজাভাবে হাত, পা, সােজা করে খাড়া হয়ে দাঁড়ালে ও সামনে তাকালে তার যে অবস্থা সেটাকে বলা হয় দৈহিক অবস্থা (Anatomical Position)। 

দেহতত্ত্বের বর্ণনা ও বােঝার সুবিধার জন্য কতকগুলাে কাল্পনিক রেখা দ্বারা দেহকে ভাগ করা হয়ে থাকে। 

মধ্যমা ভল (Median Plane) ঃ মধ্যমা তল হলাে একটি কাল্পনিক উল্লম্ব হল যা মানবদেহের কেন্দ্রবিন্দু দিয়ে অতিক্রম করে গেছে এবং মানবদেহকে সমান দুই ভাগে ভাগ করেছে। 

ভীর্যক ভল (Sagittal Plane) ঃ এটি একটি কাল্পনিক উল্লম্ব তল যা দেহের মধ্যমা তলের সমান্তরালভাবে অতিক্রম করেছে। 

কিরীট তল (Coronal Plane) ঃ এটি একটি কাল্পনিক উল্লম্ব তল যা দেহের মধ্যমা হলের সমকোণে অতিক্রম করে দেহকে সামনে এবং পিছনে দুইটি অংশে বিভক্ত করেছে। 

অনুভূমিক তল (Horizontal or Transverse Plane) ঃ এটি একটি কাল্পনিক তল যা দেহের মধ্যমা ও কিরীট তলকে সমকোণে অতিক্রম করে দেহকে উপর এবং নিচ দুইটি অংশে বিভক্ত করেছে।



ধ্যমাবর্তী (Medial) ঃ মধ্যমা তলের নিকটবর্তী অঙ্গকে মধ্যমাবর্তী অঙ্গ বলে। যেমন- আলনা (Uina) হাড়টি রেডিয়াস (Radius) হাড় থেকে মধ্যমাবর্তে (Medially) অবচিত।

পার্শ্ববর্তী (Lateral)    মধ্যমা  তলের দূরের অঙ্গকে বলা হয় পার্শ্ববর্তী (Lateral)। যেমন- হাতের রেডিয়াস (Radius) হাড়টি আনা (UIna) থেকে পার্শ্ববর্তী (Laterally) অবস্থানে রয়েছে।

অভ্যন্তরীণ (Internal)  দেহের কেন্দ্রের দিকে অবস্থিত যে কোন শিরা, নালী, অঙ্গ প্রভৃতি আভ্যন্তরীণ অঙ্গ (Internal Organ)। যেমন- পিত্ত থলি (Gall Bloder) আভ্যন্তরীন অঙ্গ।

বাহ্যিক (External) ঃ দেহের বাইরের দিকে অবস্থিত অঙ্গসমূহকে বাহ্যিক অঙ্গ (External Organ) বলে। যেমন- ত্বক (Skin) বাহ্যিক অঙ্গ।

উর্ববর্তী (Superficial) ঃ দেহের উপরিভাগ থেকে কল্পনা করলে যেটা উপরিভাগের কাছে অবস্থিত তাকে উর্ধ্ববর্তী অঙ্গ (Superficial Organ) বলা হয়। যেমন- বাহুর মাংশ পেশি হাড়ের ঊর্ধবর্তে অবস্থিত। গভীর (Deep) ও দেহের গভীরে বা ভেতরে অবস্থিত অঙ্গসমুহকে গভীরের অঙ্গ (Deep Organ) বলা হয়। যেমন- বাহুর হাড় মাংশ পেশির গভীরে অবস্থিত।

সম্মুখবর্তী (Anterior) ঃ দেহের সামনের দিকের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হলাে সম্মুখবর্তী অঙ্গ (Anterior Organ)। যেমন- হাতের তালু (Palm) সম্মুখবর্তী। পশ্চাৎবর্তী (Posterior) ৪ দেহের পিছনের দিকের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হলাে পশ্চাৎবর্তী অঙ্গ (Posterior Organ)। যেমন- হাতের পিঠ (Dorsam) পশ্চাত্বতী।

উধের্ক্ষ (Superior) : দেহের মাথার নিকটবর্তী অঙ্গ হলাে উধের অঙ্গ। যেমন- হূদপিন্ড ব্যবচ্ছেদ পেশির (Diaphargm) উধের্ফ অবস্থিত।

নিচে (Inferior) : দেহের পায়ের দিকের অঙ্গ হলে নিচের অঙ্গ। যেমন- ব্যবচ্ছেদ পেশি (Diaphargm) হৃদপিন্ডের নিচে অবস্থিত।

এক দিকে (Ipsilateral) : দেহের একই পাশে অবস্থিত অঙ্গ। যেমন- ডান হাত এবং ডান পা দেহের একই দিকে অবস্থিত। বিপরীত দিকে (Contralateral) ও দেহের বিপরীত পাশে অবস্থিত অঙ্গ। যেমন- ডান হাত এবং বাম হাত দেহের বিপরীত দিকে অবস্থিত।

যদি শরীরের তিনটি অঙ্গ পাশাপাশি বা সমান্তরালভাবে চলে বা এগিয়ে যায় তাহলে যেটি বাইরের দিকে সেটি হলাে পার্শ্ববর্তী অঙ্গ (Lateral Organ), মাঝেরটি হলাে অন্তত অজ্ঞ (Intermediate Organ) এবং ভেতরেরটি হলাে মধ্যমাবর্তী অঙ্গ (Medial Organ) প্রভৃতি।

দেহের বিভিন্ন অঙ্গর মৌলিক গঠন অনুযায়ী -  বর্ণনা কোষ (Cell) হলাে মানব দেহ গঠনের ও কাজের একটি একক (Unit)। একই উৎস থেকে উদ্ভূত, একই আকৃতির বা ভিন্ন আকৃতির কোষগুলাে (Cells) যখন মিলিতভাবে কোন নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করে তখন সমষ্টিগত কোষকে একত্রে কলা (Tissue) বলা হয়। যেমন একটির পর একটি ইট দিয়ে এক একটি দালানের অংশ গঠিত হয় তেমনি একটির সঙ্গে অন্য অনেকগুলাে কোষ (Cell) যােগ হয়ে তৈরি হয় একটি কলা (Tissue)। মানব দেহে প্রধানত চার ধরনের কলা (Tissue) থাকে। যেমন- আবরণী কলা, যােজক কলা, পেশি কলা ও স্নায়ু কলা! দুই বা ততধিক ধরনের কলা একত্রিত হয়ে তৈরি হয় এক একটি অঙ্গ (Organ); যেমন হূৎপিণ্ড (Heart), ফুসফুস (Lung), বৃক্ক (Kidney) ইত্যাদি এবং কয়েকটি অঙ্গ একত্রিত হয়ে তৈরি হয় একটি তন্ত্র (Organ System)। মানবদেহকে প্রধানত ১১ টি তত্ত্বে বিভক্ত করা যায়। যেমন- কঙ্কাল তন্ত্র, পেশি তু, শ্বসনতন্ত্র, হৃদপিন্ড ও রক্তসংবহনতন্ত্র, লসিকাত, পরিপাকতন্ত্র, রেচনতন্ত্র, জননতন্ত্র, অন্তঃক্ষরাতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র ও বহিরাবরণতন্ত্র।

ককালতন্ত্র (Skeletal System) ঃ এই তত্ত্ব অস্থি, তরুণাস্থি, সন্ধি প্রভৃতি সমন্নয়ে গঠিত।

ককালতন্ত্রের কাজ : দৈহিক কাঠামােগঠন, চলাচল, রক্ষণাবেক্ষণ, সঞ্চয়, লােহিত কণিকা উৎপাদন প্রভৃতি।

পেশিতন্ত্র (Muscular System) : এই তত্ত্ব অস্থির সাথে যুক্ত বিভিন্ন পেশি নিয়ে গঠিত।

পেশিকলার কাজ : পেশি কলা মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালনের জন্য দায়ী। অস্থি সংলগ্ন

পেশির সংকোচন – প্রসারণের ফলে মানুষ চলা ফেরা ও স্থানান্তরিত হতে পারে।

শাসনতন্ত্র (Respiratory System) ঃ এই তন্ত্র হলাে শ্বাস যন্ত্র বা Pharynx, শ্বাসনালী বা Trachea, শ্বাসঝিল্লির বা Bronchi এবং তার সঙ্গে যুক্ত ফুসফুসদ্বয় বা Lungs ও তার বিভিন্ন অংশ নিয়ে গঠিত।

সনতন্ত্রের কাজ : বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে রক্তে মিশ্রিত করা ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড রক্ত থেকে বের করে দিয়ে রক্তকে বিশুদ্ধ করা।

হৃদপিন্ড ও রক্তসংবহনতন্ত্র (Cardio Vescular System) ঃ এর মধ্যে আছে হূৎপিন্ড বা Heart, ধমনী বা Artery, শিরা বা Vain এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত সরু ও সূক্ষতম ধর্মনী ও শিরার নালিকাগুলাে।

হৃদপিন্ড ও রক্তসংবহন তন্ত্রেরকাজ : রক্তসঞ্চালন, অক্সিজেন পরিবহন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবহন, খাদ্যসার পরিবহন, সঞ্চিত খাদ্য পরিবহন, হরমােন পরিবহন, দৈহিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করা প্রভৃতি।

লসিকান্ত্র (Lymphatic System) ঃ সিকা, লসিকা গ্রন্থি ও লসিকা নালী নিয়ে এই তত্ত্ব গঠিত হয়।

লসিকারকাজ : প্রতিরক্ষা, প্রতিরােধ, প্রােটিন পরিবহন, তৈলাক্ত বা স্নেহ পদার্থ পরিবহন, পুষ্টি সাধন, শশাষণ, দেহরসের পুনর্বণ্টন প্রভৃতি।

পরিপাকতন্ত্র (Digestive System) : মুখবিবর, গলবিল, অন্ননালী, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র , যকৃত, অগ্নাশয়, পিত্তথলি প্রভৃতি নিয়ে এই তত্র গঠিত হয়।

পরিপাকতন্ত্রের কাজ : খাদ্যগ্রহন, পরিপাক, শােষণ, বৈর্জ্য পদার্থ ত্যাগ প্রভৃতি এই তন্ত্রের কাজ।

রেচনতন্ত্র (Urinary System) : এক জোড়া বৃক্ক, এক জোড়া রেচন নালী বা ইউরেটার, একটি মূত্রথলি ও মূত্রনালী নিয়ে এই তন্ত্র গঠিত।

রেচনতন্ত্রের কাজ : রক্ত থেকে নাইট্রোজেন জাতীয় বর্জ্য অপসারণ করা, রক্তে অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, দেহে পানির ভারসাম্য রক্ষা করা, ভিটামিন ডি ও লােহিত কণিকা তৈরিতে অংশ নেয়া, দেহে সােডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্লোরাইড ইত্যাদির পরিমাপ নিয়ন্ত্রণ করা।

অণতন্ত্র (Reproductive System) : পুরুষ প্রজননতন্ত্র ও স্ত্রী প্রজননতন্ত্র নিয়ে এই তত্র গঠিত।

জননতন্ত্রের কাজ : মানুষের বংশবৃদ্ধি করা, পুরুষ এবং স্ত্রী গ্যামেট শুক্রাণু, ডিম্বাণু সৃষ্টি ও নিষেকের মাধ্যমে জনন সম্পন্ন করে সন্তান-সন্ততি উৎপন্ন করা।

অন্তঃক্ষর তত্র (Endocrine System) ঃ পিটুইটারী, থাইরয়েড, প্যারা থাইরয়েড, এড্রেনাল প্রভৃতি গ্রন্থি নিয়ে এই তত্র গঠিত হয়।

অতঃক্ষরা তন্ত্রের কাজ : দেহের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, থাইরয়েড গ্রন্থির ক্ষরণ ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চলের বৃদ্ধি, ক্ষরণ ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ, জনন গ্রন্থির বৃদ্ধি, ক্ষরণ ও কার্য নিয়ন্ত্রণ, মাতৃদেহে দুখ ক্ষরণ ও নিয়ন্ত্রণ, বিপাক বৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রণ এবং যৌনলক্ষণ প্রকাশে সহায়তা করা।

স্নায়ুতন্ত্র (Nervous System) ঃ এই তন্ত্র হলাে মতিঙ্ক (Brain) ও তা থেকে ছড়িয়ে পড়া সুষ কান্ড (Spinal cord) এবং তার সংলগ্ন অসংখ্য স্নায়ু (Nerves) নিয়ে গঠিত।

স্নায়ুতন্ত্রের কাজ : অনুভূতি গ্রহণ, পরিবহন, সময় এবং স্নায়ু উদ্দীপনা বহন করা।

বহিরাবরণ তত্র (Integumental System) : ত্বক, চুল, নখ, ঘর্ম গ্রন্থি এবং তৈল গ্রন্থি নিয়ে এই তন্ত্র গঠিত।

বহিরাবরণ তন্ত্রের কাজ : দেহের প্রতিরক্ষা, তাপ নিয়ন্ত্রণ, জলীয় পদার্থের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা।

বিশেষ অনুভূতির অঙ্গসমূহ ঃ মানুষের বিশেষ বিশেষ অনুভূতি ও কাজের জন্য যে সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ব্যবহৃত হয় তাকে বিশেষ অনুভূতির অঙ্গ (Special Sense Organs) বলা হয়। সেগুলি হলাে ঃ
১। জিবা বা Tongue যার দ্বারা আমরা স্বাদ গ্রহণ করি।
২। চক্ষু গােলক বা Eye ball যার দ্বারা আমরা দর্শন করি।
৩। নাক বা Nose যার দ্বারা আমরা ঘ্রাণ উপভােগ করি।
৪। কান বা Ear যার দ্বারা আমরা শব্দ শ্রবণ করি।
৫। চর্ম বা Skin যার দ্বারা আমরা স্পর্শ অনুভব করি।

দেহের নানা তরল পদার্থ  - মানব দেহের বিভিন্ন স্থানে নানা ভাবে প্রচুর তরল পদার্থ (Body Fluids) রয়েছে। এই সব তরল পদার্থের অভাব হলে পানি দ্বারা পূর্ণ হয়। তরল পদার্থের অভাব প্রকট হলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যেমন: কলেরা বা। ডাইরিয়া হলে অথবা অতিরিক্ত রক্তপাত হলে মানুষের শরীরে তরল পদার্থের অভাব প্রকট হয়ে পরে। সেই জন্য ঐ সময়ে পানি, চিনি ও লবনের মিশ্রণ (Saline) রক্তে প্রচুর পরিমাণে মিশ্রিত করা হয়। মানব দেহের বিভিন্ন তরল পদার্থের (Fluids) বর্ণনা নিচে দেয়া হলাে:

আন্তঃকোষ তরল পদার্থ বা Intracellular Fluids ঃ মানব দেহের বিভিন্ন কোষের মধ্যস্থিত তরল পদার্থকে আন্তঃকোষ তরল পদার্থ (Intracellular Fluids) বলা হয়। আন্তঃকোষ তরল পদার্থ শরীরের মােট ওজনের ৪০%।

বহিঃকোষ তরল পদার্থ বা Extracellular Fluids : দেহের বিভিন্ন কোষের বাইরের তরল পদার্থ। শরীরের মােট তরল পদার্থের শতকরা ২০% ভাগ হলাে এই গুলাে। এই গুলাে হলাে সেই মাধ্যম বা Midium, যার মধ্যে কোষ বা Cell গুলাে বেঁচে থাকে এবং এদের মাধ্যমে খাদ্য, পুষ্টি, লবণ, অক্সিজেন পেয়ে থাকে। বহিঃকোষ তরল পদার্থ। আবার দুইটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। যেমন-
ক) কোষসমূহের মধ্যবর্তী তরল পদার্থ (Interstitial Fluids),
খ) রক্তের তরল পদার্থ (Blood Plasma)।

এ ছাড়াও বিশেষ ধরনের বহিঃকোষ তরল পদার্থ আছে তাদের ট্রালসেলুলার তরল পদার্থ (Transcellular Fluid) বলা হয়। যেমন -

ক) সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (Cerebrospinal Fluid),
খ) সাইনােভিয়াল ফ্লুইড (Synovial Fluid),
গ) পেরিটোনিয়াল ফ্লুইড (Peritonial Fluid),
ঘ) পেরিকার্ডিয়াল ফ্লুইড (Pericardial Fluid),
ঙ) ইন্ট্রাঅকুলার ফ্লুইড (intraocular Fluid) প্রভৃতি।


রক্তের তরল পদার্থ বা Blood Plasma ঃ এ গুলাের পরিমাণ হলাে শরীরের মােট ওজনের প্রায় শতকরা ৫% বা প্রায় ৩ লিটার এবং এগুলাে পরিবহনের কাজ করে। বহিঃকোষ তরল পদার্থের সঙ্গে রক্তের তরল পদার্থের যে মিলন। বা আদান-প্রদান চলে তা প্রত্যক্ষভাবে হয় না। প্লাজমার রক্তে তরল পদার্থের চাপ বা Hydrostatic Pressure থাকে বেশি। তাই প্রবেদন প্রক্রিয়া (Osmotic) দ্বারা এই আদান-প্রদান (Fluid Exchange) হয়ে থাকে। প্লাজমাতে প্রােটিন আছে, যা বহিঃকোষ তরল পদার্থের মধ্যে নেই।

সারা দেহের বিভিন্ন অংশের পরিচয় - ভালােভাবে এনাটমি শেখার জন্য মানবদেহকে ৫টি এলাকায় (Region) ভাগ করা হয়। তা হলাে:
১) মাথা এবং গলা বা Head & Neck,
২) বুক বা Chest or Thorax,
৩) পেট বা Abdomen,
৪) হাত বা Superior Extremity এবং
৫) পা বা Inferior Extremity মাথার দুইটি ভাগ।

তা হলাে-
ক) মস্তিষ্ক বা Cranium এবং
খ) মুখ বা Face। তাছাড়া হাত ও পা নানাভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে যেমন হাতের ভাগ:
ক) উর্ব বাহু বা Arm,
খ) সম্মুখ বাহু বা Forearm,
গ) কজি বা Wrist,
ঘ) করতল বা Palm এবং
ঙ) হাতের আঙুল বা Finger। ।

পায়ের ভাগ:
ক) উরু বা Thigh,
খ) পা বা Leg,
গ) পদতল ব.Foot এবং
ঘ) পায়ের আঙুল বা Toe ডায়াফ্রাম বা ব্যবচ্ছেদ পেশি: এটি হলো একটি পেশি, এই পেশি উপরের দিকে বেঁকে আছে এবং বুক ও পেঠকে ঠিক দুইটি ভাগে ভাগ করেছে। এর উপরে আছে বুক এবং এর নিচে আছে পেট। বুকে বা Thorax এ প্রধান যে সব অঙ্গসমূহ থাকে তাহলাে:

১) হৃদপিন্ড বা Heart, |
২) দুইটি ফুসফুস বা Lungs,
৩) শ্বাসনালী বা Trachea ও বায়ুনালী বা Bronchi,
৪) অন্ননালী বা Oesophagus

হৃদপিন্ড বা Heart থাকার কারণে ফুসফুস দুইটি বা Lungs এর মাঝে যে গর্ত হয় তার নাম বক্ষ গহবর বা Mediastenum। এ ছাড়া সব শিরা ও ধমনীর উৎস মুখে এই বক্ষ গহবর অবস্থিত। পেটের ভাগ : পেটের প্রধান দুইটি অংশ হলাে:
ক) উপরের পেট ও
খ) তলপেট।

এর অবস্থান হলাে ব্যবচ্ছেদ পেশি বা Diaphragm এর নিচে। পেটের উপরের অংশে আছে:
১) পাকস্থলী বা Stomach,
২) পরিপাকের যত্র, ক্ষুদ্র ও বৃহৎ অনত্র বা Intestines,
৩) যকৃৎ বা Liver,
৪) প্লীহা বা Spleen,
৫) পিত্তকোষ বা Gall Bladder,
৬) অগ্নাশয় বা Pancreas,
৭) বৃক্ক বা Kidney এবং
৮) মহাধমনী বা Aorta ও মহাশিরা বা Inferior Vena Cava এখানে থাকে।

নিচের অংশ বা বতিকোটরে (Pelvic Cavity) যে অঙ্গসমুহ রয়েছে, তা হলাে:
১) মুত্রথলি বা Urinary Bladder,
২) জনন অঙ্গসমুহ বা Reproductive Organs এবং
৩) বৃহৎ অন্ত্রের অংশ বা Colon & Rectum।

এটি হলাে পেটের মােটামুটি ভাগ। তা ছাড়া এনাটমির বর্ণনার জন্য পেটকে চারটি কাল্পনিক লাইন দিয়ে মােট নয়টি ভাগে ভাগ করা হয়, তা হলাে
১) ডান উল্লম্ব তল (Right Vertical Plane)- এই তলটি ডান স্তনবৃন্তের সােজাসুজি নিচে নেমে আসে।
২) বাম উল্লম্ব তল (Left Vertical Plane)- এই তলটি বাম শুনবৃন্তের সােজাসুজি নিচে নেমে আসে।
৩) পাইলােরাসের মধ্যতল (Transpyloric Plane)- এটি সামনের পাজরার বরাবর আড়াআড়ি তল।
৪) টিউবারকুলের অন্তর্বর্তী তল (Inter Tubercular Plane)- বস্তির দুইটি প্রধান হাড় (Pelvic Bone) এর পয়েন্ট বা Anterior Superior lliac Spine- এর সংযােগ লাইন। এর ফলে পেট যে নয়টি ভাগে বিভক্ত হলাে, তা হচ্ছে
ক) উপরের তিনটি ভাগ
      ১) ডান হাইপােকোনদ্রিয়াক (Right Hypochondriac), '
      ২) ইপিগ্যাসট্রিক (Epigastriac) ও
      ৩) বাম হাইপােকোনদ্রিয়াক (Left Hypochondriac)। |
খ) মাঝের তিনটি ভাগ
     ৪) ডান লাম্বার (Right Lumber), রাইট ভার্টিকেল ।
     ৫) আম্বিলিক্যাল (Umbilical) ও
     ৬) বাম লাম্বার (Left Lumber)।

গ) নিচের তিনটি ভাগ
    ৭) ডান ইলিয়াক (Right lliac), ট্রান্সপাইলােরিক
    ৮) হাইপােগ্যাষ্ট্রিক (Hypogastric) ও
    ৯) বাম ইলিয়াক (Left liac)।



এই ভাগ অনুযায়ী পেটের ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গসমূহের অবস্থান ও রােগের লক্ষণ বুঝতে সুবিধা হয়। কোন্ কোন্ অঙ্গ কোথায় অবস্থান করে, তা এ ইন্টারটিউবারকুলার পেইন থেকে সহজে বােঝা যায়।



সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন - 
১। দেহতত্ত কাকে বলে?
২। শরীরতত্ত্ব কাকে বলে? -
৩। দেহতত্ত্ব ও শরীরত্বের মধ্যে পার্থক্য কী?
৪। মানবদেহের অঙ্গসমূহের কার্যপ্রণালি সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোন শাখায় আলােচিত হয়? ৫। স্নায়ুরােগ বিদ্যা কাকে বলে?
৬। দৈহিক অবস্থা বলতে কি বােঝ?
৭। মানব দেহকে কয়টি তলে বিভক্ত করা যায়? তলগুলাে কি কি?
৮। তীর্যক তল কাকে বলে?
৯। সম্মুখবর্তী বলতে কি বােঝ?
১০। অঙ্গ বলতে কি বােঝ?
১১। বিশেষ অনুভূতির অঙ্গ কয়টি ও কি কি?
১২। আন্তঃকোষ তরল পদার্থ কাকে বলে?
১৩ । আন্তঃকোষ তরল পদার্থ ও বহিঃকোষ তরল পদার্থের মধ্যে পার্থক্য কি?
১৪। ভালােভাবে দেহতত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার জন্য মানব দেহকে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয়? ভাগগুলাে কি কি?
১৫। ডায়াফ্রাম কাকে বলে?

রচনামূলক প্রশ্ন -
১। মানবদেহের তলগুলাের বর্ণনা দাও।
২। তন্ত্র কাকে বলে? মানব দেহের বিভিন্ন তন্ত্রগুলাের বর্ণনা দাও।
৩। মানব দেহের বিভিন্ন তরল পদার্থের বর্ণনা দাও।
৪। পেটকে প্রধানত কয়টি অংশে ভাগ করা হয়? কোন কোন অংশে কি কি অঙ্গ থাকে? .
৫। পেটের ১টি ভাগ চিত্রসহ বর্ণনা কর।

Post a Comment

0 Comments