কোষ ও কোষের গঠন - মানুষসহ সকল জীবের দেহের গঠন ও কাজের একক (Unit) হলাে কোষ (cell)। মানবদেহ প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন বা ততােধিক কোষ নিয়ে গঠিত।
কোবেল্প আকার, আকৃতি ও সংখ্যা। আকার (Size).: কোষের আকার বিভিন্ন মাপের হতে পারে। সাধারণত ৫ মাইক্রোমিটার (5 im) থেকে ৫০ মাইক্রোমিটার (50 Im) পর্যন্ত হয়।
আকৃতি (Shape) : কোষের আকৃতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন- লম্বা, চ্যাপ্টা, মাকু, পিরামিড, ফ্লাক্স প্রভৃতি আকৃতির হতে পারে। সংখ্যা (Number) : মানবদেহ ২০০ শত অপেক্ষা বেশি বিভিন্ন ধরনের কোষ নিয়ে গঠিত।
কোষ (Cell) এর গঠন - অতি সামান্য একটি জটিল রাসায়নিক পদার্থ (Chemical) বা পােটোপ্লাজম (Protoplasm) ও তার মাঝে একটি, গ্রীণ কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস (Nucleas) একটি কোষ আবরণী (Cell Membrane) দ্বারা বেষ্টিত হয়ে একটি কোষ (cell) গঠিত হয়। তা ছাড়া আরও নানা পদার্থ থাকে এর মধ্যে। নিউক্লিয়াস (Nucleus) বাদে কোষের (Cell) বাকি প্রােটোপ্লাজমের নাম সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm)। সাইটোপ্লাজমের ভেতর যে সমস্ত সজীব বস্তু থাকে তাকে কোষের অঙ্গাণু বলা হয়। অঙ্গাণুগুলাে হলাে- মাইটোকন্ড্রিয়া, এন্ডােপ্লাজমিক জালিকা, গলজি কতু, লাইসােজোম, রাইবােজোম, সেন্ট্রিওল প্রভৃতি।
১) কোষ আবরণী (Cell Membrane) ও কোষের প্রােটোপ্লাজম বাইরের দিক হতে যে সূক্ষ্ম, স্থিতিস্থাপক, ভেদ্য, লাইপােপ্রােটিন দিয়ে গঠিত ব্রিতরীয় আবরণে আবৃত থাকে তাকে কোষ আবরণী বলে। এটি কোষকে সর্বদা ঘিরে রাখে। এর মধ্য দিয়ে কোনাে কোনাে কন্তু বিন্দু বিন্দু করে প্রবেশ করতে ও বেরিয়ে যেতে পারে, তবে সব কন্তু প্রবেশ করতে বা বেড়িয়ে যেতে পারে না। এই আবরণের পুরুত্ব ৭.৫ থেকে ১০ ন্যানােমিটার (7.5 to 10 nm)। এবং শুধুমাত্র ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখা যায়।
কোষ আবরণীর কাজ :
- কোষ অভ্যন্তরের বহুসমূহকে রক্ষা করা ও আবৃত রাখা এর প্রধান কাজ।
- বিভিন্ন কোষাঙ্গাণু যেমন- মাইটোকন্ড্রিয়া, গলজি বস্তু, নিউক্লিয়ার পর্দা প্রভৃতি তৈরিতে সহায়তা
- কোযের সঠিক আকৃতি প্রদান করা। * অভিস্রবণ বা ব্যাপনের সাহায্যে বিভিন্ন বস্তুকে কোষের অভ্যন্তরে নেয়া ও কোষ থেকে বের
- ফ্যাগােসাইটোসিস (Phagocytosis) ও পিনােসাইটোসিস (Pinocytosis) পদ্ধতিতে কোষের বাইরের কছুকে ভক্ষণ করা।
২) প্রােটোপ্লাজম (Protoplasm) : কোষ প্রাচীর দ্বারা আবৃত কোষ মধ্যস্থ, অর্থ স্বচ্ছ, দানাদার, বর্ণহীন জেলীর মতাে সজিব বস্তুই প্রােটোপ্লজম। প্রােটোপ্লাজমের দুইটি অংশ : সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm) এবং নিউক্লিয়াস (Nucleus)।
ক) সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm) : কোষ প্রাচীর থেকে নিউক্লিয়ার পর্দা পর্যন্ত বিস্তৃত জেলীর মতাে অর্ধতরল, অবচ্ছ, দানাদার প্রােটোপ্লাজমীয় অংশকে সাইটোপ্লাজম বলে।
সাইটোপ্লাজমের কাজ?
- কোষের অঙ্গাণু ও অথ বতুকে ধারণ করা।
- কোষের বিভিন্ন বিপাকীয় ক্রিয়া সম্পন্ন করা।
- কোষের অঙ্গাণুগুলােকে একস্থান থেকে অন্য স্থানে প্রেরণ এবং খাদ্যের সারাংশ, এনজাইম, হরমােন প্রভৃতিকে কোষের বিভিন্ন অংশে সরবরাহ করা।
- কোষ বিভাজন ও কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
খ) প্রাণ কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস (Nucleus) ঃ নিউক্লিয়াস হলাে কোষের (Cell) প্রাণ কেন্দ্র। প্রােটোপ্লাজমের প্রায় কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সর্বাপেক্ষা বড়, ঘন ও গােলাকার বা ডিম্বাকার অংশটি হলাে নিউক্লিয়াস। এর আকার ও আকৃতি কোষ ভেদে বিভিন্ন হয়, সাধারণত ৫ থেকে ১০ মাইক্রোমিটার-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। একটি আদর্শ কোষে একটি মাত্র নিউক্লিয়াস থাকে। তবে কোন কোন কোষে ২ থেকে ১০টি নিউক্লিয়াস থাকতে পারে। কোষ বিভাজনের সময় একটি নিউক্লিয়াসে ৪টি অংশ দেখা যায়। যথা
i) নিউক্লিয়ার মেমব্রেল (Nuclear Membrane) ঃ নিউক্লিয়াস যে স্বচ্ছ অর্ধভেদ্য এবং অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত নরম পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে তাকে নিউক্লিয়ার মেমবেন বলে। এটা লাইপােপ্রােটিন দ্বারা গঠিত হয়।
নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের কাজ ?
- নিউক্লিয়াসের আকৃতি প্রদান করা। .
- নিউক্লিয়াসের রক্ষণাবেক্ষণ করা।
- এন্ডােপ্লাজমিক রেটিকুলাম তৈরি করা।
- বিভিন্ন কস্তুর যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা।
ii) নিউক্লিওপ্লাজম (Nucleoplasm) ঃ নিউক্লিয়াসের মধ্যে স্বচ্ছ, দানাদার, সমসত্ত্ব তরল পদার্থ হলাে : নিউক্লিওপ্লাজম। এর রাসায়নিক গঠন জটিল। এর মধ্যে নিউক্লিওপ্রােটিন, নিউক্লিক অ্যাসিড, এনজাইম ও খনিজ লবন ইত্যাদি থাকে।
নিউক্লিওপ্লাজমের কাজঃ
- নিউক্লিয়াসে জৈবিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করা।
- ডিএনএ (DNA), আরএনএ (RNA) ও প্রােটিন জাতীয় পদার্থ তৈরি করা।
iii) নিউক্লিওলাস (Nucleolus) : নিউক্লিয়াসের সর্বাপেক্ষা ঘন ও গােলাকার বস্তুটি হলাে নিউক্লিওলাস। এটা DNA, RNA, প্রােটিন ও লিপিড দ্বারা গঠিত হয়। এতে অনেক এনজাইম আছে।
নিউক্লিওলাসের কাজঃ
- কোষ বিভাজনে অংশগ্রহন করা।
- আরএনএ (RNA), রাইবােজোম ও প্রােটিন সংশ্লেষণে অংশ গ্রহণ করা।
iv) ক্রোমাটিন তুলতু (Cromatin Network) নিউক্লিওপ্লাজমের অভ্যন্তরে সুতার মত পদার্থ হলাে ক্রোমাটিন ততু। এর এক একটি অংশকে বলা হয় ক্রমােজামস (Cromosomes)। এগুলাে হলাে কোষের সমস্ত কর্ম ক্ষমতার মূল উপাদান।
ক্রোমাটিন ততুর কাজ ?
- ক্রমােজোম এ DNA ধারণ করা। .
- কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রণ করা।
- বংশগতি ধারণ ও বহন করা।
- প্রােটিন সংশ্লেষণে অংশগ্রহণ করা।
৩) মাইটোকনডিয়া (Mitochondria) : মাইটোকনড্রিয়া হলাে অতি ক্ষুদ্র লম্বা লম্বা পদার্থ যা কোষের সাইটোপ্লাজমে সর্বত্র বিক্ষিপ্তভাবে থাকে এবং কোষ বিভাজনের (Cell Division) সময় স্পিন্ডল (Spindle) -এর কাছাকাছি থাকে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ মাইক্রোমিটার, প্রস্থ ০.৫ মাইক্রোমিটার, পূরুত্ব ০.২ থেকে ২ মাইক্রোমিটার। প্রতি কোষে এর সংখ্যা ২০০ থেকে ৩০০টি। মাইটোকন্ডিয়া একটি দ্বিস্তর বিশিষ্ট ঝিল্লি দ্বারা আবৃত। ঝিল্লিটি প্রােটিন ও লিপিড় দ্বারা গঠিত। বাইরের স্তরটি মসৃণ কিনতু ভেতরের তরটি অনিয়মিতভাবে ভাঁজ হয়ে থাকে। এই ভঁজ হওয়া অংশকে ক্রিষ্টি (Cristae) বলে। ক্রিস্টির গায়ে বহু সবৃন্ত্রক গােলাকার বস্তু থাকে, এদের অক্সিজম (Oxyzome) বলে। শ্বসনের জন্য প্রয়ােজনীয় বিভিন্ন এনজাইম অলিজমে সুবিনা থাকে |
মাইটোকনড্রিয়ার কাজঃ
- শ্বসনের বিভিন্ন বিক্রিয়া মাইটোকন্ডিয়াতে সংঘটিত হয়ে থাকে। কোষের বিভিন্ন প্রকার জৈবিক কাজে শক্তি সরবরাহ করে বলে মাইটোকন্ডিয়াকে কোষের শক্তিকেন্দ্র (Power House) বলে।
- কিছু ডিএনএ (DNA) ও আরএনএ (RNA) উৎপন্ন করে। * স্নেহ বিপাকে অংশগ্রহণ করে।
- প্রােটিন সংশ্লেষণে সহায়তা করে।
মাইটোকন্দ্রিয়ার রাসায়নিক গঠন
৪) গজি কতু (Golgi Complex) : কোষের নিউক্লিয়াসের (Nucleus) কাছে মসৃণ জালিকাযুক্ত বিশেষ ধরনের অঙ্গাণু হলাে গলজি বস্তু। ক্ষরণ কাজে নিয়ােজিত কোষে এই অঙ্গাণুগুলো বেশি পরিমাণে থাকে। ইলেক্ট্রোন মাইক্রোস্কোপ যন্ত্রে এদের তিন ধরনের গঠন দেখা যায় : .
ক) সিস্টারনি (Cisternae) ঃ এইগুলাে সমান্তরালে অবস্থিত লম্বা, চ্যাপ্টা, অসমান দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট।
খ) ভেসিকল (Vesicle) ঃ এইগুলো অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ও গােলাকার, সিস্টারনির নিম্নদেশে থাকে।
গ) ভ্যাকুল (Vacuole) ঃ এইগুলাে গােলাকার থলির মত, সিস্টারনির কাছে থাকে।
গজি কর কাজ ও :
- কোবে নিঃসরিত পদার্থ পরিবহণ করা।
- বহুবিধ খাদ্যবস্তুর সঞ্চয় ভান্ডার হিসেবে কাজ করা।
- বিপাকীয় কাজে অংশগ্রহণ করা।
৫) এন্ডােপ্লাজমিক জালিকা (Endoplasomic Reticulum) : নিউক্লিও পর্দা থেকে শুরু করে সাইটোপ্লাজম পর্যন্ত * বিস্তৃত জালীকা আকারে বিন্যস্ত কোষ অঙ্গাণুগুলােকে এন্ডােপ্লাজমিক জালিকা বলে। এদের গায়ে রাইবােজোম
থাকলে অমসৃণ এন্ডােপ্লাজমিক জালিকা এবং রাইবােজোম না থাকলে মসৃণ এন্ডােপ্লাজমিক জালিকা বলা হয়।
এভােপ্লাজমিক জালিকার কাজ :
- কোষের বিভিন্ন অঙ্গাণুর মধ্যে সংযােগ রক্ষা করা।
- কোষের অভ্যন্তরে এনজাইমের সুষ্ঠু বন্টন করা।
- অমসৃণ এন্ডােপ্লাজমিক জালিকার কাজ প্রােটিন তৈরি ও সংরক্ষণ করা।
- মসৃণ এন্ডােপ্লাজমিক জালিকার কাজ লিপিড বিপাক ও হরমােন তৈরি করা।
,
৬) লাইসােহ্মোম (Lysosome) : সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত সূক্ষ্ম আবরণ বেষ্টিত কোষের পরিপাককারী
ক্ষুদ্র অঙ্গাণু হলাে লাইসােজোম। এরা সাধারণত গােলাকার হয়।
লাইসােজোমের কাজ :
* জীব দেহের অকেজো অংশকে ধ্বংস করা।
* খাদ্যকণা.কোষে প্রবেশ করলে লাইসােজোমের এনজাইম তাকে পরিপাক করে। "
* ফ্যাগােসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় শ্বেত কণিকাকে সহায়তা করা।
৭) রাইবােজোম (Ribosome) : কোষের সাইটোপ্লাজোমে ও এন্ডােপ্লাজমিক রেটিকুলামের বাইরের দিকে অবস্থিত রাইবােনিউক্লিও প্রােটিন সমন্বয়ে গঠিত যে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলাে প্রােটিন সংশ্লেষণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে তারা হলাে রাইবােজোম।।
রাইবােজোমের কাজ :
- দ্ব প্রােটিন সংশ্লেষণে সহায়তা করা।
- দ্ব স্নেহ জাতীয় পদার্থ গঠন ও বিপাকে সহায়তা করা।
- দ্ব ফ্যাগােসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় শ্বেত কণিকাকে সহায়তা করা।
কোষের উপাদান ও কাজ
কোষ (Cell) -এর উপাদানসমূহ - কোষে অবস্থিত কতুগুলাে রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করলে যে সমস্ত বস্তু পাওয়া যায় তা হলাে ঃ
- প্রােটিন জাতীয় পদার্থ যার রাসায়নিক গঠন খুবই জটিল ধরনের।
- চর্বি বা স্নেহ (Fat) জাতীয় পদার্থ।
- শর্করা (Carbohydrate) জাতীয় পদার্থ।
- লবণ (Inorganic Sait) জাতীয় পদার্থ। এর মধ্যে প্রধান হলো সােডিয়াম, পটাসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম এর ফসফেট ও ক্লোরাইড। ”
- পানি বা (H2O)।
কোষের বিভিন্ন ক্রিয়া
- খাদাদ্রব্য গ্রহণ এবং হজম করা (Ingestion and Assimilation) - অখিত তরল পদার্থ এবং আলতঃকোষ তরল পদার্থ (Interstitial Fluid and Intracellular Fluid) এই দুটির মধ্যে অভিস্রবণ প্রক্রিয়া (Osmosis) দ্বারা যে আদান প্রদান হয়, এর মাধ্যমে কোষ তার প্রয়ােজনীয় অ্যামাইনাে অ্যাসিড (Amino Acid), লবণ (Salt) প্রভৃতি খাদ্য গ্রহণ করে ও পরিত্যাজ্য অংশ ত্যাগ করে। এর ফলে কোষের পুষ্টি, বৃদ্ধি প্রভৃতি হয়ে থাকে।
- বৃদ্ধি, মেরামত বা ক্ষয়পুরণ (Growth and Repair) - প্রতিটি কোষের মধ্যে নতুন প্রােটোপাজম জন্ম নেয় ও তার পুষ্টি ঘটে। তাছাড়া গঠনমূলক কাজ (Anabolism) দ্বারা কোষের ক্ষয়পূরণ বা মেরামতের কাজ হয়ে থাকে।
- বিপাক প্রক্রিয়া (Metabolism) - প্রতিটি কোষের কাজ করার জন্য চাই শক্তি (Energy)! খাদ্যের কণাগুলাে প্রথমত ভেঙে যায়, এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ভঙ্গ প্রক্রিয়া (Catabolism)। তারপর খাদ্য কণাগুলাে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় গঠনমূলক কাজ করে ও তাপ সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় (Anabolism)। এই দুইটি প্রক্রিয়াকে একসঙ্গে বলা হয় বিপাক প্রক্রিয়া (Metabolism)।
- বায়ু পরিবর্তন (Respiration) -ফুসফুস যে অক্সিজেন গ্রহণ করে তা মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ে রক্তের মাধ্যমে। এমনকি প্রতিটি কোষ পর্যন্ত তা পৌছে যায় এবং কোষগুলাে অক্সিজেন গ্রহন করে। আবার কোষ থেকে নিঃসৃত কার্বন-ডাই-অক্সাইড বা co, শিরা দ্বারা বাহিত হয়ে যায় হৃদপিণ্ডে। তারপর তা ফুসফুস থেকে প্রশ্বাসের সঙ্গে বেড়িয়ে যায়।
- দুষিত পদার্থ ত্যাগ (Excretion) – শরীরের ত্যাজ্য বা বিষাক্ত পদার্থ কোষগুলাে থেকে বেরিয়ে রক্তে মিশে যায়। তারপর তারা নানা পথে দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। দেহের ত্যাজ্য পদার্থ যে সমস্ত পথে দেহ থেকে বের হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলাে : .
- ককার্বন-ডাই-অক্সাইড বের হয় ফুসফুস থেকে নাকের ছিদ্র পথে।
- কতকগুলাে তরল পদার্থ বের হয় বৃক্ক বা Kidney দিয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে। বৃক্ক মানবদেহের ছাকনির কাজ করে থাকে।
- কতগুলাে ত্যাজ্য পদার্থ বের হয় মলাশয় বা Colon দিয়ে পায়খানার সঙ্গে আবর্জনা রূপে।
৬) উত্তেজনা ও সঞ্চালন (Irritability and Conductivity) - প্রতিটি কোষ হলাে কর্মক্ষম। যে কোনাে রাসায়নিক পদার্থের বিক্রিয়াজনিত-তাপ, চাপ, বৈদ্যুতিক প্রবাহ, আঘাত প্রভৃতিতে কোষগুলাে উত্তেজিত হয়ে উঠে। আবার কখনও কখনও এটি সংকুচিত হয় যেমন মাংশ পেশীর তন্তু বা Muscle Fibre। আবার কখনও বা বার্তা বয়ে নিয়ে যায় বা সঞ্চালন করে। যেমন : স্নায়ুতন্তু বা Nerve Fibre ।
৭) প্রজনন (Reproduction) - একটি কোষ ভেঙে দুটি ভাগে বিভক্ত হতে পারে। এর মূল হলাে সেন্ট্রোসাম (Centrosome) এর কাজ। সেন্ট্রোলাম দুভাগে ভাগ হয় ও সেই সঙ্গে নিউক্লিয়াসের (Nucleus) এর চেহারার পরিবর্তন ঘটে। তারপর দুটি কোষের মধ্যে একটি তর (Layer) পড়ে ও দুটি নিউক্লিয়াসে দুইটি কট্রোলাম দেখা যায়। একটি প্রাণকেন্দ্রে বা নিউক্লিয়াসে ক্রোমজমের সংখ্যা হলাে মােট ৪৬টি। যখন কোষ বিভাজল হয় তখন দেখা যায় প্রতিটি নিউক্লিয়াসে ৪৬টি করেই ক্রোমজম আছে। তা থেকে এটা বুঝতে পারা যায় যে, প্রতিটি ক্রোমজম দুইটি সমান ভাগে বিভক্ত হয়েছে। এ ভাবে কোষ বিভক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া বা Mitosis। তবে সব সময় কোষ এ ভাবে বিভক্ত হয় না। দেহের জরুরি প্রয়ােজনে এই ভাবে বিভক্ত হয়ে থাকে।
এ ছাড়া আর এক ধরনের কোষ বিভাজন হলাে পরােক্ষ কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া বা Meosis। এটি সাধারণত জনন যন্ত্রেই হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় একটি কোষ বহু ভাগে বিভক্ত হয়। এই প্রক্রিয়া দ্বারাই মাতৃগর্ভে ভ্রুণ ও সন্তানের . জন্ম হয়ে থাকে।
ক) সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন -
১। কোষ কাকে বলে?
২। কোষের অঙ্গাণুগুলোর নাম উল্লেখ কর।
৩। সাইটোপ্লাজম বলতে কী বােঝ?
৪। এন্ডােপ্লাজমিক জালিকা কত প্রকার ও কি কি?
৫। মাইটোকন্ড্রিয়া বলতে কি বােঝ?
৬। লাইসােজোমের কাজ কী?
৭। কোষের কোন অঙ্গাণুকে শক্তিকেন্দ্র বলা হয়?
৮। ক্রোমজোমের কাজ কী?
৯। একটি কোষে কয়টি নিউক্লিয়াস থাকে?
১০। কোষের রাসায়নিক উপাদানগুলাের নাম উল্লেখ কর।
খ) ক্ষচনামূলক প্রশ্ন।
১। একটি মানব কোষের চিত্র এঁকে চিহ্নিত কর।
২। কোষ আবরণীর গঠন ও কাজ বর্ণনা কর।
৩। নিউক্লিয়াসের কয়টি অংশ? চিত্রসহ বর্ণনা কর।
৪। মাইটোকন্ড্রিয়ার গঠন ও কাজ বর্ণনা কর। |
৫। কোষের কাজ বর্ণনা কর।
0 Comments