পাঠ ৮ আকাইদ ও নৈতিকতা

 

ইসলামের মূল বিষয়সমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার নামই আকাইদ। যেমন : তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত ইত্যাদি। আর নৈতিকতা হলাে নীতির অনুশীলন। অর্থাৎ কথা ও কাজে উত্তম রীতি-নীতির। অনুশীলন করা, মার্জিত ও বিনয়ী হওয়া, উত্তম চরিত্রবান হওয়া ইত্যাদি। অন্যায়, অশ্লীল ও অশালীন বিষয়সমূহ পরিত্যাগ করাও নৈতিকতার অন্তর্ভুক্ত। 

নৈতিকতা ও নীতির অনুসরণ মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। নীতিহীন মানুষ পশুর সমান। পশুর কোনােরূপ নীতিবােধ নেই। সে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারে। ভালাে-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ কোনাে কিছুরই সে পরােয়া করে না। সে শুধু নিজের লাভ ও কল্যাণই বােঝে। নীতিহীন মানুষও ঠিক তেমনি। সে কোনােরূপ আইন-কানুন, বিধি-বিধান মানে না। সে নৈতিক আচরণ পালন করে না। বরং নিজের লাভের জন্য সে অপরের ক্ষতিসাধন করে থাকে। মিথ্যা, প্রতারণা, ধোঁকা দেওয়া, পরচর্চা ইত্যাদি তার চরিত্রে ফুটে ওঠে। সমাজে সে নানারূপ অশান্তি সৃষ্টি করে। ফলে সমাজের কেউই তাকে বিশ্বাস করে না। কোনাে মানুষই তাকে ভালােবাসে না। 

অন্যদিকে নৈতিকতা মানুষকে প্রকৃত মানুষে পরিণত করে। নীতিবােধসম্পন্ন মানুষ সমাজে শ্রদ্ধা ও ভালােবাসা লাভ করে। সকলেই তাঁকে সম্মান করে। 

আকাইদ ও নৈতিকতার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। আকাইদ বা ইসলামি বিশ্বাসসমূহ মানুষকে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়। যে ব্যক্তি আকাইদের বিষয়গুলাে ভালােভাবে বিশ্বাস করে তার চরিত্র সুন্দর হয়। সে সবসময় নীতি ও উত্তম আদর্শের অনুসরণ করে। অন্যায়-অত্যাচার, অশ্লীলতা থেকে সে সর্বদা দূরে থাকে। সে কখনাে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না। বরং সমাজ থেকে দুর্নীতি প্রতিরােধে সে সচেষ্ট হয়। 

আকাইদের প্রথম বিষয় হলাে তাওহিদ। তাওহিদ হলাে একত্ববাদ । আল্লাহ তায়ালাকে এক ও অদ্বিতীয় বলে বিশ্বাস করা। তিনি সকল কিছুর স্রষ্টা ও মালিক। তিনিই সকল ক্ষমতার অধিকারী ইত্যাদি বিশ্বাস করা। তাওহিদে এরূপ বিশ্বাসী ব্যক্তি কখনাে অনৈতিক কাজ করতে পারে না। কেননা সে জানে যে তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বল আলামিন। তিনি তাকে সর্বদা দেখছেন এবং তার সকল কাজের হিসাব রাখছেন। সুতরাং সে সর্বদা আল্লাহ তায়ালার হুকুমমতাে জীবনযাপন করে। অন্যায়, অত্যাচার ও পাপ কাজ থেকে দূরে থাকে। 

তাওহিদের পরই আসে রিসালাত। রিসালাত হলাে নবি-রাসুলগণের উপর বিশ্বাস। তারা আল্লাহ তায়ালার মনােনীত বান্দা। তাঁরা ছিলেন মানবজাতির মধ্যে শ্রেষ্ঠজন। তাঁরা নিস্পাপ ও উন্নত নৈতিক চরিত্রের 

অধিকারী। সুতরাং রিসালাতে বিশ্বাসী মানুষ নবি-রাসুলগণের চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাঁদের ন্যায় সেও ওঁ উত্তম চরিত্র অনুশীলন করে। উদ্ধত ও অশালীন চলাফেরা ও কথাবার্তা তার থেকে কখনাে প্রকাশ পায় না। 


আখিরাতে বিশ্বাস আকাইদের অন্যতম অংশ। আখিরাত হলাে পরকাল । মানুষের এ দুনিয়ার জীবনই শেষ নয়। বরং মৃত্যুর সাথে সাথে আরেক জীবনের শুরু হবে। এরই নাম আখিরাত। এ জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। এ জীবন অনন্ত ও চিরস্থায়ী। আখিরাতে মানুষের দুনিয়ার কাজকর্মের হিসাব নেওয়া হবে। দুনিয়াতে যে ভালাে ও নেক কাজ করবে আখিরাতে সে চিরশান্তির জান্নাত লাভ করবে। আর দুনিয়ায় যে অন্যায় ও পাপ কাজ করবে আখিরাতে সে চরম শাস্তির মুখােমুখি হবে, তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। সুতরাং আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে দুনিয়ার জীবনে ভালাে কাজ করতে উৎসাহিত করে। আখিরাতের সফলতা ও শান্তির আশায় মানুষ ভালাে কাজ করে, সকলের সাথে মিলেমিশে চলে এবং উত্তম চরিত্রবান হয়। অন্যদিকে আখিরাতের শাস্তির ভয়ে মানুষ মন্দ ও অশ্লীল কাজ পরিত্যাগ করে। অন্যায়, অত্যাচার ও পাপ কাজ থেকে দূরে থাকে। এভাবে মানুষ আখিরাতে বিশ্বাসের ফলে নৈতিকতা অনুশীলন করে থাকে। অতএব, নৈতিকতা অর্জনে আকাইদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ভালােভাবে তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাস করব । দুনিয়াতে নৈতিকতার অনুশীলন করব, অনৈতিক কাজকে কখনােই পছন্দ করব না। তাহলে আমরা ইহকাল ও পরকালে সফলতা লাভ করব । 

কাজ : শ্রেণির সব শিক্ষার্থী মিলে তাদের মধ্য থেকে দুইজন ছাত্র দুইজন ছাত্রীকে নির্বাচন করবে। তারা প্রত্যেকে এই পাঠ থেকে কী শিক্ষা পেলাে তা আলােচনা করবে আর অন্য সব শিক্ষার্থী শুনবে। 

নতুন শব্দাবলি 

ইলাহ - মাবুদ, উপাস্য। 

মাবুদ – ইবাদতের যােগ্য/ অধিকারী । যার ইবাদত করা হয়। 

লা-শারিক – যার কোনাে অংশীদার নেই। 

দীন –ধর্ম, জীবন বিধান। 

আরশ - আল্লাহ তায়ালার আসন। 

উম্মত – অনুসারী বা দল। যেমন : আমরা হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর উম্মত; দল। দাওয়াত – আহ্বান। আল্লাহ তায়ালা ও দীন ইসলামের দিকে আহবানকে দাওয়াত বলা হয়।



সৃজনশীল প্রশ্ন 

মেজবাহ এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে মামার বাড়ি বেড়াতে গেল। মামা তাকে নিয়ে খুলনার সুন্দরবন বেড়াতে গেল। সুন্দরবনের গাছগাছালি ও সমুদ্রতীরের মনােরম দৃশ্যাবলি দেখে সে মুগ্ধ হলাে এবং মামাকে বলল কী চমক্কার সৃষ্টি! সে মামাকে প্রশ্ন করল, ‘মামা এসব কী আল্লাহর সৃষ্টি, নাকি প্রকৃতির সৃষ্টি?’ মামা তাকে বুঝিয়ে বলল যে, এ পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহর সৃষ্টি। চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র এবং এসব গাছগাছালি, জলপ্রপাত, সমুদ্রের জলরাশি সবই তাঁর সৃষ্টি। 

  • ক. কালিমা তাইয়্যিবার অর্থ লেখ। 
  • খ. রিসালাত বলতে কী বােঝায়? ব্যাখ্যা কর। 
  • গ. মামার নিকট মেজবাহর প্রশ্নটি আকাইদের কোন বিষয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর। 
  • ঘ. মেজবাহর মামার উত্তরটির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা কর। 


মাহমুদা ও শাহিদা দুইজন খুবই ভালাে বন্ধু। একদিন কথা প্রসঙ্গে মাহমুদা বলল, “দেখ শাহিদা সূর্য প্রতিদিন একই নিয়মে উঠছে, দিন শেষে আবার রাত হচ্ছে। এতে কোনাে রকম ব্যতিক্রম নেই। এগুলাে কিন্তু আল্লাহর ইশারাতেই হচ্ছে। উত্তরে শাহিদা বলল, এছাড়া আল্লাহ তায়ালা দীন প্রচার করা, সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা, অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি কাজের জন্য যুগে যুগে নবি-রাসুলগণকে প্রেরণ করেন। 

  • ক. আখিরাতের অর্থ কী? 
  • খ. নৈতিকতা বলতে কী বােঝায়? ব্যাখ্যা কর । 
  • গ. মাহমুদা কোন বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছে তা তােমার পাঠ্যপুস্তকের আলােকে ব্যাখ্যা কর। 
  • ঘ. মাহমুদার কথায় বিশ্বাস স্থাপন এবং শাহিদার কথার অনুশীলনই মানবকল্যাণ নিশ্চিত করে। বিষয়টি বিশ্লেষণ কর। 


Post a Comment

0 Comments