পাঠ ৭ আখিরাত

 

আখিরাত অর্থ পরকাল । মানুষের দুনিয়ার জীবনকে বলা হয় ইহকাল । আর ইহকালের পরের জীবনই হলাে পরকাল । আরবিতে একে বলা হয় আখিরাত। মানুষের মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে বলা হয় আখিরাত । এ জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। আখিরাতে মানুষ জান্নাতের শান্তি বা জাহান্নামের শাস্তি ভােগ করবে।


আখিরাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব - আখিরাতে বিশ্বাসের গুরুত্ব তাওহিদ ও রিসালাতে বিশ্বাসের পরপরই আমাদেরকে আখিরাতে বিশ্বাস করতে হবে। আখিরাতে বিশ্বাস 

করলে কেউ মুমিন হতে পারবে না । আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে চরিত্রবান ও সৎকর্মশীল করে তােলে। কেননা যে ব্যক্তি আখিরাতে বিশ্বাস করে, সে জানে আখিরাতে মানুষকে দুনিয়ার কাজের প্রতিদান দেওয়া হবে। সেখানে দুনিয়ার কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে। যে ব্যক্তি ভালাে কাজ করবে সে পুরস্কার লাভ করবে। তার স্থান হবে চিরশান্তির জান্নাত। আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে পাপ ও অন্যায় কাজ করবে সে আখিরাতে শাস্তি ভােগ করবে। সে জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে। সুতরাং আখিরাতে বিশ্বাস করলে মানুষ ভালাে কাজ করতে উৎসাহিত হয়, মন্দ কাজ করা থেকে বিরত থাকে। এভাবে আখিরাতে বিশ্বাস মানুষকে কল্যাণের পথে পরিচালনা করে। 

বলা হয়ে থাকে, ‘দুনিয়া হলাে আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। শস্যক্ষেত্রে মানুষ যেরূপ চাষাবাদ করে সেরূপ ফসল লাভ করে। যেমন কেউ ধান চাষ করলে ধান লাভ করে। গম চাষ করলে গম লাভ করে। তেমনি ভালাে করে চাষাবাদ করলে ফসল বেশি লাভ করে। আর অলসতার কারণে চাষাবাদ না করে জমি ফেলে রাখলে সে কিছুই লাভ করে না। দুনিয়া ও আখিরাতের অবস্থাও ঠিক তেমন। আমরা যদি দুনিয়াতে ভালাে কাজ করি, আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ মেনে চলি তাহলে আখিরাতে ভালাে ফল লাভ করব। আর যদি নিজ ইচ্ছামতাে চলাফেরা করি, অন্যায় ও পাপ কাজ করি তাহলে আমরা পরকালে কঠিন শাস্তির মুখােমুখি হবাে। সুতরাং পরকালের অনন্ত জীবনের জন্য দুনিয়াতেই আমাদেরকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। 

আখিরাতের পর্যায়সমূহ-  আখিরাত বা পরকালের বেশ কয়েকটি পর্যায় রয়েছে। যেমন : কবর, কিয়ামত ও হাশর। 

কবর - পরকালীন জীবনের প্রথম ধাপ বা পর্যায় হলাে কবর। একে ‘আলমে বারযাখ'ও বলা হয়। মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে এ জীবনের শুরু হয়। এরপর কিয়ামত বা হাশর পর্যন্ত কবরের জীবন চলতে থাকে। 

মৃত্যুর পর মানুষকে কাফন পরিয়ে কবরে রাখা হয়। এ সময় কবরে দুইজন ফেরেশতা আগমন করেন। তাদের নাম মুনকার-নাকির। তাঁরা মৃত ব্যক্তিকে তিনটি প্রশ্ন করেন। এগুলাে হলাে- তােমার রব কে? তােমার দীন কী? এবং তােমার নবি কে? যেসব লােকের কবর দেওয়া হয় না তারাও এ প্রশ্ন থেকে রেহাই পায় না। 

দুনিয়ার জীবনে যারা আল্লাহ তায়ালাকে বিশ্বাস করে এবং রাসুলের নির্দেশ মেনে চলে তারা এ প্রশ্নগুলাের সঠিক উত্তর দিতে পারবে। তাদের কবর হবে শান্তিময় । আর যারা দুনিয়াতে ইমান আনেনি, দীন মেনে 

চলেনি তারা এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। তারা সে সময় শুধু আফসােস করবে। কবরের সু জীবন তাদের জন্য হবে অতি কষ্টদায়ক।  


কিয়ামত -  কিয়ামত অর্থ মহাপ্রলয়। পৃথিবীতে এমন একসময় আসবে যখন মানুষ আল্লাহ তায়ালাকে ভুলে যাবে। দুনিয়াতে আল্লাহ বলার মতাে কোনাে লােক থাকবে না। সে সময় আল্লাহ পাক দুনিয়া ধ্বংস করে দেবেন। তার নির্দেশে হযরত ইসরাফিল (আ.) শিঙ্গায় ফুঁক দেবেন। ফলে মহাপ্রলয় ঘটবে । এ দুনিয়ায় যা কিছু আছে সব ধ্বংস হয়ে যাবে। পাহাড়-পর্বত তুলার ন্যায় আকাশে উড়তে থাকবে। পৃথিবীর নিচের সমুদয় ধন-সম্পদ বের হয়ে আসবে । সবকিছু উলট-পালট হয়ে যাবে। কোনাে প্রাণী বা বস্তু অবশিষ্ট থাকবে না। কেবল আল্লাহ তায়ালা থাকবেন। তিনি ব্যতীত আর কেউ বিরাজমান থাকবে না। এ অবস্থাকেই বলা হয় কিয়ামত বা মহাপ্রলয় । 


হাশর - হাশর শব্দের অর্থ সমাবেশ, ভিড়, চাপ ইত্যাদি। কিয়ামতের পর বহুকাল একমাত্র আল্লাহ পাক বিদ্যমান থাকবেন । অতঃপর তিনি পুনরায় সমস্ত প্রাণীকে জীবিত করবেন। তাঁর হুকুমে হযরত ইসরাফিল (আ.) দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁক দেবেন। ফলে সকল প্রাণী পুনরায় জীবিত হবে। একে বলা হয় মৃত্যুর পর পুনরুত্থান। এ সময় একজন ফেরেশতা সবাইকে আহবান করবেন। ফলে সকলে একটি বিশাল ময়দানে সমবেত হবে। একে বলা হয় হাশর। আল্লাহ তায়ালা এখানে সকলের পাপপুণ্যের হিসাব নেবেন। সকল মানুষকে সে সময় আল্লাহ তায়ালার সামনে জবাবদিহি করতে হবে। সেদিন সূর্য মাথার অতি নিকটে থাকবে । প্রচণ্ড গরমে মানুষ ঘামতে থাকবে। 

এমনকি অনেকে ঘামের মধ্যে সাঁতার কাটবে। আল্লাহ রাব্বল আলামিনের আরশের ছায়া ব্যতীত সেদিন অন্য কোনাে ছায়া তথা আশ্রয়স্থল থাকবে না। ইমানদার পুণ্যবানগণ সেদিন আরশের ছায়াতলে স্থান লাভ করবেন। তাদের ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে । আমলনামায় দুনিয়ার জীবনের সকল পাপপুণ্যের হিসাব লেখা থাকবে। পাপীরা বাম হাতে আমলনামা পাবে। এরপর আল্লাহ পাক মহাবিচার শুরু করবেন। এটিই হলাে শেষ বিচারের দিন। এদিন মহান আল্লাহ হবেন একমাত্র বিচারক। নবি-রাসুল ও ফেরেশতাগণ এদিন সাক্ষী হবেন। মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলােও এদিন সাক্ষ্য দান করবে। আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) এদিন তাঁর উম্মতদের জন্য সুপারিশ (শাফাআত) করবেন। 

হাশরের ময়দানে মানুষের পাপপুণ্যের ওজন করা হবে। এটি সম্পন্ন হবে মিযান-এর মাধ্যমে। মিযান হলাে পরিমাপক যন্ত্র। যাদের পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা জান্নাতের নানারকম নিয়ামত ভােগ করবেন। সেখানে তারা যা চাইবে তা-ই পাবে। যাদের মিযানে পাপের পাল্লা ভারী হবে তারা হবে জাহান্নামী। জাহান্নাম হলাে ভীষণ কষ্টের স্থান। সেখানে তারা আগুনে দগ্ধ হবে। তবে কখনাে মারা যাবে না। বরং কষ্ট ভােগ করতে থাকবে। মৃত্যুর পরবর্তী অনন্ত জীবনই হলাে আখিরাত। সেখানে মানুষের পাপপুণ্যের হিসাব নেওয়া হবে। পুণ্যবানগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর পাপীরা জাহান্নামের শাস্তি ভােগ করবে। সুতরাং আমরা দুনিয়াতে তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতে বিশ্বাস করব । আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ মেনে চলব। ন্যায় ও সকাজ করব। তবেই পরকালে চিরশান্তির জান্নাত লাভ করতে পারব। 

কাজ : শিক্ষার্থীরা আখিরাতের স্তরসমূহের একটি ধারাবাহিক তালিকা তৈরি করবে। 




Post a Comment

0 Comments