Happiness in action


আমরা অনেকেই কাজ করে আনন্দ পাই। কাজে সফলতা লাভের জন্য প্রয়ােজন আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হওয়া এবং সৃজনশীল চিন্তা চেতনার প্রয়ােগ করা। সাধারণত কায়িক ও মেধাশ্রম প্রয়ােগ করে কাজ সম্পন্ন করতে হয়। কাজের মাধ্যমে আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এখন আমরা আত্মমর্যাদা, আত্মবিশ্বাস, সৃজনশীলতা, কায়িক ও মেধাশ্রমের ধারণা লাভ করতে চেষ্টা করব। 



এই অধ্যায় শেষে আমরা 
• আত্মমর্যাদা, আত্মবিশ্বাস, সৃজনশীলতা এবং কারিক ও মেধাশ্রমের ধারণা দিতে পারব। 
• কাজের ক্ষেত্রে আত্মমর্যাদা, আত্মবিশ্বাস ও সৃজনশীলতার ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করতে পারব। 


পাঠ ১: আত্মমর্যাদার ধারণা তােমরা হয়ত তােমাদের চারপাশে এ রকম কথাবার্তা শুনে থাকবে- করিম সাহেব একজন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষ। এই আত্মমর্যাদা শব্দটি দিয়ে আসলে কী বােঝায়? শব্দ ভেঙে যদি অর্থ বের করার চেষ্টা করি, তবে দেখা যায় ‘আত্ম অর্থ নিজ আর মর্যাদা অর্থ সম্মান। তাহলে আত্মমর্যাদা বলতে কি ‘নিজেদের প্রতি সম্মান’কে বােঝায়? এসাে নিচের ঘটনাগুলাে থেকে বােঝার চেষ্টা করি ঘটনা-১: নিতু কলেজে পড়ে। তার ভালাে আচরণের জন্য সবাই তাকে খুব পছন্দ করে। সে বাড়ির সব কাজে মাকে সাহায্য করে। মা তাকে প্রায়ই বলেন, “তাের আমাকে সাহায্য করতে হবে না। আমি নিজেই করব। নিতু উত্তর দেয়, তােমরা সবাই আমাকে এত উত্সাহ দাও, আদর কর, পড়ালেখায় সাহায্য কর, তােমাদের সবার জন্য তাে আমার কিছু করা উচিত। আমি জানি, কাজ করার মধ্যে লজ্জার কিছু নেই বরং এতে সম্মান বাড়ে। নিতুর এ আত্মমর্যাদাবােধে মা খুবই খুশি হলেন, বললেন, “এমন আত্মমর্যাদাবান মেয়েই আমাদের দরকার। 


ঘটনা-২ : আজিজ মেধাবী ছাত্র। সে খুব ছােটবেলায় এক দুর্ঘটনায় তার বাম পা হারায়। সে এখন স্ক্র্যাচ ব্যবহার করে চলাফেরা করে। স্কুলে সব পরীক্ষায়। আজিজ প্রথম হয়। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায়। সে এ+ পেয়েছে। নতুন স্কুলে এসে ভর্তি হলে সবাই | তার সুন্দর আচরণে মুগ্ধ হল। তার পরীক্ষার ফলাফলও খুব ভালাে। ক্লাসের সবাই একদিন টিফিনের সময় আজিজকে জিজ্ঞেস করল, ওর যে পা | নেই তাতে ওর মন খারাপ হয় কি না। সে পড়ালেখায়ই বা এত ভালাে করছে কেমন করে? আজিজ ওদের বলল- আমার পা নেই তাতে কি আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব পরিশ্রম করি। বাড়িতে সবাই আমাকে খুব ভালােবাসে এবং যে কাজগুলাে আমি করতে পারি না, সে কাজগুলােতে আমাকে সাহায্য করে। প্রথম দিকে আমার খুব মন খারাপ হতাে, তবে এখন ? আমার নিজেকে অন্য সবার মতই মনে হয়। 

ঘটনা-৩ : তাপস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। সে কখনও কাউকে অসম্মান করে না, মন্দ কথাও বলে না। অন্যের সাথে মতের অমিল হলেও তর্ক করে না। সে বিশ্বাস করে, অন্য কারাে চিন্তাধারা ভিন্ন হতেই পারে। একদিন ওর ক্লাসের সাগর বলেছিল, আনিস স্যারের পড়ানাে ওর খুব ভালাে লাগে। কিন্তু অনিক বলল, আনিস স্যার খুব তাড়াতাড়ি কথা বলেন, তাই ওর বুঝতে কষ্ট হয়। এই নিয়ে দুজনের যখন তর্ক-বিতর্ক শুরু হবার উপক্রম, তখন তাপস বলল, তােমরা দুজনেই নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছ এবং এটা করার অধিকারও তােমাদের আছে। তর্ক না করে তােমরা দুজন দুজনের মতামতকে শ্রদ্ধা করতে পারাে, তাই না? আমি একটি বইয়ে পড়েছি- যারা নিজেদের সম্মান করে তারা অন্যদেরও সম্মান করে । উপরের ঘটনাগুলাে থেকে আমরা কী শিখতে পারি? উপরের ঘটনাগুলাে থেকে আমরা বুঝতে পারি, একজন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষ 

• নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে; কোন ধরনের ন্যায় কাজ করতে লজ্জাবােধ করে না। 
• নিজের কোন শারীরিক বা মানসিক সীমাবদ্ধতা থাকলেও নিজের ক্ষমতা ও সামর্থ্যকে সম্মান করে। 
• অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। 

অনেকে মনে করেন, আত্মমর্যাদা হলাে নিজের কাছে নিজের সম্মান ও মানুষ হিসেবে নিজের পরিচয় সম্পর্কে সচেতন থাকা। আবার কেউ মনে করেন, আত্মমর্যাদা হলাে নিজের চারপাশ ও নিজের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সে অনুযায়ী আচরণ করা। অন্যায় কাজ করতে লজ্জাবােধ করা, মানুষ হিসেবে সকল মানুষের কাছে গ্রহণযােগ্য আচরণ করা, ভালাে ও নতুন কিছু চিন্তা করা ইত্যাদি আত্মমর্যাদাবােধের পরিচয় বহন করে। সবার কাছে গ্রহণযােগ্য রুচিবােধের প্রকাশও আত্মমর্যাদাবােধের পরিচয়। 

দলগত কাজ 
চার-পাঁচজনের দল তৈরি করে তােমাদের অভিজ্ঞতা থেকে আত্মমর্যাদাবিষয়ক একটি ঘটনা বর্ণনা কর। 



পাঠ ২ - ৪ : কাজের ক্ষেত্রে আত্মমর্যাদা কাজের মাধ্যমেই অর্জিত হয় মর্যাদা। আমাদের আত্মমর্যাদার প্রকাশ ঘটে কাজের মাধ্যমেই। নিচের ছকের কাজগুলাে আত্মমর্যাদার পরিচয় বহন করে কি না, তােমার উত্তর হ্যা/ না আকারে লিখ 


এখন চলাে নিজের ভাবনাটাকে মূল্যায়ন করি। সােহেল নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করে। কারণ হিসেবে সে বলে- ‘বুদ্ধিমানেরা নিজের ওপর নির্ভর করে, আর বােকারা নির্ভর করে অন্যের ওপর। কাজেই নিজের কাজ নিজে করাটা আত্মমর্যাদার পরিচায়ক। এখন থেকে আমরা সবাই সােহেলের মতাে নিজের কাজ নিজে করার চেষ্টা করব । মানুষ হিসেবে আমাদের লজ্জাবােধ থাকা উচিত। অন্যায় করলে আমরা লজ্জিত হই। সেজন্য ফাতেমা যদি তার কোনাে আচরণের কারণে বাবা-মায়ের কাছে বকা খায়, তাহলে সে লজ্জিত হয়। সে বাবা-মায়ের চাওয়া - পাওয়াকে শ্রদ্ধা করে এবং তাদের মতামত মেনে চলে। ফাতেমার এই আচরণ আত্মমর্যাদাবােধের পরিচয় বহন করে। আমরা যদি খুব উচ্চস্বরে কথা বলি তাতে আমাদের চারপাশের মানুষের অসুবিধা হতে পারে। 

একজন আত্মমর্যাদাবােধ সম্পন্ন মানুষ অন্যের অসুবিধা হয় এমন কিছু করেন না। কাজেই, রমার আস্তে কথা বলা তার আত্মমর্যাদাবােধ সম্পর্কে সচেতনতার পরিচয় বহন করে। শিরিন তার আত্মমর্যাদা সম্পর্কে সচেতন। সেই সাথে সে নিজের দায়িত্ব পালনের প্রতি এবং বিদ্যালয়ের ৪ নিয়মকানুন মেনে চলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তার মতে, অন্যরা সবাই যদি পারে তাহলে আমিও পারব। 

সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, গণস্বাক্ষরতা অভিযান অনুযায়ী আত্মমর্যাদা সম্পর্কে সচেতনতার পরিচয় বহন করে। আমরা যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকি আমাদের পােশাক যদি পরিচ্ছন্ন না হয় তা হলে আমাদের নােংরা দেখাবে। আমাদের গায়েও ঘাম ও ময়লায় দুর্গন্ধ হবে। অন্যের গায়ের দুর্গন্ধ আমাদের নাকে এলে আমাদের কি ভালাে লাগে? আমাদের আশেপাশে যারা রয়েছে তাদেরও এতে খুব অসুবিধা হয়। যাঁরা কায়িক শ্রম করেন, আমাদের উচিত তাদের সম্মান করা। রিকশা চালানাে, নৌকা চালানাে, ক্ষেতে কাজ করা ইত্যাদি অনেক কঠিন কাজ। তারা এ কঠিন কাজগুলাে করেন বলেই আমাদের জীবন অনেক সহজ হয়ে গেছে। আমাদের উচিত তাদের সম্মান করা। তারা যখন কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরেন, তখন তাদের সেবা করা। তাদের বিশ্রামের উপযােগী পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া । কাজেই আমরা সবসময় নিজের কাজ নিজে করব ।

 তবে না শিখে বিপজ্জনক কাজ করব না। আমরা অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাব এবং সম্ভব হলে অন্যকে তার কাজে যথাসাধ্য সাহায্য করব। সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকব । কোনাে কাজে ভুল হয়ে গেলে নিজেকে ছােট মনে না করে সঠিকভাবে করার জন্য কারাে কাছ থেকে শিখে নেব। এতে লজ্জাবােধ করার কিছু নেই। সব মানুষ সঠিকভাবে সব কাজ করতে পারে না। সঠিকভাবে কাজ করার জন্য কাজ শিখে নিতে হয় এবং বারবার চেষ্টা করতে হয়। তাই আমরা নিজের প্রতি শ্রদ্ধা ও আত্মবিশ্বাস হারাব না । আত্মমর্যাদার গল্প জগদীশচন্দ্র বসু লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি নিয়ে ভারতবর্ষে ফিরে এলে তাঁকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অস্থায়ী অধ্যাপকের পদে নিযুক্ত করা হল। সেই সময় সাহেবরা ভাবতেন ভারতীয়রা বিজ্ঞান শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত নয়। তাই ঐ পদে ইংরেজরা যে বেতন পেতেন জগদীশকে দেওয়া হতাে 

তার দুই-তৃতীয়াংশ । আবার অস্থায়ী বলে ঐ বেতনের অর্ধেকটা জগদীশচন্দ্র বসুর হাতে আসত। ইংরেজ ও ভারতীয়দের মধ্যকার এই বৈষম্যে জগদীশচন্দ্রের আত্মসম্মানে ঘা লাগল । তিনি এর প্রতিবাদ জানালেন । তরুণ এ অধ্যাপকের কথায় কেউ কর্ণপাত করল না। শেষ পর্যন্ত তিনি স্থির করলেন যে তিনি বেতনই নেবেন না। তিনি একাধারে তিন বছর কোনাে বেতন না নিয়ে অধ্যাপনা করে গেলেন। কর্তৃপক্ষ অবশেষে তাঁর ন্যায্য অধিকারের কাছে নতিস্বীকার করল । ইংরেজ অধ্যাপকের সমতুল্য বেতন নির্ধারণ করে তার পাওনা সকল টাকা পরিশােধ করল । জগদীশচন্দ্র বসু একজন আত্মমর্যাদাবান ব্যক্তি। 


দলগত কাজ 
তােমরা হয়ত তােমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ খুঁজে পাবে যারা জগদীশচন্দ্র বসুর মতাে অত্যন্ত আত্মমর্যাদাবান । এসাে এমন মানুষের কাহিনী নিয়ে আমরা পােস্টার বানাই। 
প্রত্যেক দল একটি করে আত্মমর্যাদার গল্প পােস্টারে লিখ। 
[এ কাজের জন্য একটি শ্রেণি কার্যক্রম বরাদ্দ করতে হবে। 
সব দলের গল্পগুলাে পােস্টার আকারে দেয়ালে ঝুলিয়ে দাও। 
[এ কাজের জন্য একটি শ্রেণি কার্যক্রম বরাদ্দ করতে হবে।] 


উপরের প্রথম ছবিতে রাকিবের, দ্বিতীয় ছবিতে নিতুর মধ্যে কী দেখেছ এবং তৃতীয় ছবিতে শ্রেণিতে যারা হাত তােলেনি, তাদের মধ্যে কিসের অভাব ছিল? নিতু ও রাকিবের মধ্যে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস ছিল, তাই তারা একটুও ভয় পায়নি। তৃতীয় ছবিতে কারাে কারাে মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল, তাই তারা হাত তােলেনি । তারা ভয় পাচ্ছিল কারণ তারা আত্মবিশ্বাসী ছিল না। তাহলে আত্মবিশ্বাস বলতে আমরা কী বুঝব? 

‘আত্ম’ মানে তাে ‘নিজ’ । তাহলে আত্মবিশ্বাস মানে কি নিজের ওপর বিশ্বাস? হঁ্যা, ঠিক তাই । আত্মবিশ্বাস মানে হলাে নিজের জ্ঞান, কর্মক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা সম্পর্কে বিশ্বাস ও আস্থা । যাদের নিজেদের কর্মক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা সম্পর্কে জানা আছে ও সেটার ওপর যথাযথ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে, তারাই আত্মবিশ্বাসী। 

চলাে একটা গল্প শুনি 

এক দেশে ছিল এক লােক। তার নাম ছিল হাবু । সে খুব করে খেত শুধুই দুধ-সা। সে নিজেকে খুবই পালােয়ান মনে করত, যদিও তার গায়ে তেমন বল ছিল না । তাে সে ভাবল- গায়ে বল থাকলেই উড়া যায়। তাই সে শহরময় ঘােষণা করে বসল যে সে পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে উড়ে বেড়াবে। বােকা হাবুর মাথাতেই এলাে না যে উড়তে হলে পাখা দরকার, আর উড়তে শেখাটাও দরকার। তাে সে যথারীতি নির্দিষ্ট দিনে পাহাড়ে উঠল। সবাই তাকে নিষেধ করল। কিন্তু কে শােনে কার কথা। হাবু ভাবল- সে বিখ্যাত হয়ে যাবে দেখে সবার অনেক হিংসা হচ্ছে। তাই তারা তাকে নিষেধ করছে। নিজের বিশ্বাস মতাে হাবু দিল লাফ...আর তারপর...যা হবার তাই হল...একেবারে চিৎপটাং। 

হাবুর নিজের প্রতি এই বিশ্বাস কিন্তু আত্মবিশ্বাস নয় বরং অতি বা ভুল বিশ্বাস । আত্মবিশ্বাস হল নিজের প্রকৃত ক্ষমতা জেনে, বুঝে তারপর নিজের প্রতি বিশ্বাস বা আস্থা তৈরি হওয়া। 

কাজ -
প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজে কোন কোন ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী, তা নিয়ে খাতায় লিখবে এবং ক্লাসে সবার সামনে উপস্থাপন করবে।

পাঠ ৬ - ৮: আত্মবিশ্বাসী মানুষের গল্প জেনে এসাে আত্মবিশ্বাসী হই অনেকেই মনে করেন, আত্মবিশ্বাস হল জীবনে সফল হওয়ার মূলমন্ত্র। আত্মবিশ্বাসী না হলে জীবনে সফল হওয়া যায় না। জীবনে চলার পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা আসে। কিন্তু যারা আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান, তারা সহজে হাল ছাড়ে না। লক্ষ্যে না পৌঁছানাে পর্যন্ত চলতেই থাকে তাদের প্রচেষ্টা। যত বাধাই আসুক কিছুই তাদের থামিয়ে রাখতে পারে । 


যাদের আত্মবিশ্বাস নেই তারা অল্পতেই হাল ছেড়ে দেয়, মেনে নেয় পরাজয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা ভাবাে। বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানিরা আমাদের বঞ্চিত করেছে। আমাদের টাকায়, আমাদের সম্পদে ওরা সম্পদ গড়েছে। তারপর আমরা যখন আমাদের ন্যায্য অধিকার চাইলাম, তখন ওরা আমাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাতে লাগল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে অতর্কিতে আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। নির্বিচারে হাজার হাজার নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষ হত্যা করল। সেই জুলুম আমরা মেনে নিইনি। আমরা তার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরােধ গড়ে তুলেছি। আমাদের না ছিল অস্ত্র-শ, না ছিল সামরিক প্রশিক্ষণ। কিন্তু আমরা বাংলা মায়ের দামাল ছেলে-মেয়েরা দেশপ্রেম ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান ছিলাম। তাই আমরা শত বাধা অতিক্রম করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পেরেছি। 


তােমরা কি মুসা ইব্রাহিমের নাম শুনেছ? তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়ার সময় থেকেই তিনি পর্বতারােহণের কঠোর অনুশীলনে মগ্ন থাকতেন। এভারেস্টে আরােহণকালেও অক্সিজেন স্বল্পতা ও শারীরিক নানা বাধার মুখে পড়েন তিনি। বেশ কয়েকবার মৃত্যুমুখে পড়তে পড়তে বেঁচে ফেরেন। তবুও তিনি হার মানেননি, দমে যাননি, থেমে যাননি। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে তিনি ঠিকই এভারেস্ট জয় করেছেন। চিত্র: এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহিম বাংলাদেশের এক ছােট্ট শহরে ফেরদৌসির জন্ম। ছােটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। তাই সে খুব মনােযােগ দিয়ে পড়াশােনা করত। সে যখন স্কুলে পড়ত, তখন স্কুলে যাবার পথে কয়েকজন বখাটে ছেলে তাকে বিরক্ত করত। ফেরদৌসি ছিল সাহসী ও আত্মমর্যাদাবান মেয়ে । 


পাঠ ৯: সৃজনশীলতার ধারণা শান্তনু পত্রিকায় শিশুদের পাতা পড়ছিল। একটি শব্দ তাকে বেশ আকৃষ্ট করল। শব্দটি হল সৃজনশীলতা। শান্তনু তার মাকে প্রশ্ন করলাে- “আচ্ছা মা, সৃজনশীলতা কী? মা বললেন- 'সৃজনশীলতা হলাে নতুন কিছু সৃষ্টি করা। আবার কোনাে কাজ নতুনরূপে নতুনভাবে করাটাও সৃজনশীলতা। মা ঠিকই বলেছেন। নতুন কিছু তৈরি করা, যা ভালাে কাজে লাগতে পারে বা কোনাে কাজ নতুনভাবে করা এক ধরনের সৃজনশীলতা। যেমন : মেঝেতে আলপনা আঁকা, কবিতা বা গল্প লেখা, ছবি আঁকা, পােকার আক্রমণ থেকে ধান ক্ষেত রক্ষার জন্য নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন, কোন প্রয়ােজনীয় জিনিস তৈরি করা ইত্যাদি। সৃজনশীলতা আমাদের সবার ভেতরেই থাকে। একেকজনের ভেতর থাকে একেক রূপে, একেকঞ্জন একেক বিষয়ে সৃজনশীল হয়ে থাকেন। আমাদের ভেতরের সুকানাে সৃজনশীলতা আমরা নানা রকম কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করি। 

সাদিয়া স্বপ্ন দেখে সে বড় হয়ে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে। এখন থেকেই সে তার আশেপাশের নানারকম বাতিল বা ফেলে দেওয়া জিনিস-পত্র দিয়ে প্রয়ােজনীয় অনেক কিছু বানায়। সে তার বাতিল কলমগুলাে গলিয়ে পেপারওয়েট বানিয়েছে, পুরনাে গ্রাস আর রঙিন কাগজ কেটে কলমদানি বানিয়েছে। শিক্ষক তার এসব বানানাের কথা শুনে বললেন- আমাদের সাদিয়া একজন সৃজনশীল মেয়ে। 




Post a Comment

0 Comments