কলার গঠন ও কাজ


কলা, কলার গঠন ও কাজ একই উৎস থেকে উদ্ভূত, একই আকৃতির বা ভিন্ন আকৃতির কোষগুলাে (Cells) যখন মিলিতভাবে কোন নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করে তখন সমষ্টিগত কোষকে একত্রে কলা (Tissue) বলা হয়। মানব দেহে প্রধানত চার ধরনের কলা (Tissue) থাকে। যেমন: 
১। আবরণী কলা (Epithelial Tissue) 
২। যোজক কলা (Connective Tissue) 
৩। পেশি কলা (Muscular. Tissue) 
৪। স্নায়ু কলা (Nervous Tissue) 

আবরণী কলা (Epithetial Tissue) এই জাতীয় কলা উপরের আবরণের (Cover). কাজ করে। দেহের চর্ম, শিরা ও ধমনী প্রভৃতির উপরিভাগ ও অভ্যন্তরভাগ প্রভৃতি নানা অংশে এই ধরনের কলা বর্তমান। এক ধরনের আবরণ দ্বারা এই কলার কোষগুলাে আটকে থাকে তাকে ভিত্তি পর্দা বা Basement Membrane বলে। বিভিন্ন ধরনের আবরণী কলা সম্পর্কে নিচে বলা হল। 
১। সাধারণ আবরণী কলা (Simple Epithelium) - এগুলাে হলাে একটি মাত্র কোষের স্তর (Layer) যার মধ্যে আবার তিন ধরনের প্রকারভেদ আছে। 
  ক) আঁইশাকার আবরণী কলা (Squamous Epithelium) ও এর কোষগুলাে চ্যাপ্টা ও পাতলা হয় এবং একটির * পাশে অন্যটি সাজানাে থাকে। যেমনঃ হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠ বা Lining, ফুসফুসের বায়ুকক্ষ, রক্তবাহি নালীগুলাের ভেতরের আবরণ এইগুলাে দ্বারা তৈরি। 
  খ) স্তম্ভাকার আবরণী কলা (Columnar Epithelium) ৪ এইগুলাে লম্বা লম্বা হয় এবং একটি অন্যটির সাথে যুক্ত থাকে কিন্তু একই স্তরে পাশাপাশি অবস্থান করে। এরা সব গ্রন্থির (Gland) ভেতরের অংশে থাকে। যেমনঃ পাকস্থলি (Stomach), বৃহদান্ত্র (Large intenstine) ও পিত্তথলি (Gall bladder)। 
  গ) লােমশ আবরণী কলাঃ এগুগুলাে লম্বা হয় এবং একটি অন্যটির সাথে যুক্ত থাকে কিন্তু একই স্তরে পাশাপাশি অবস্থান করে তবে উপরিভাগে সরু লম্বা লম্বা লােম (Cilia) থাকে যা নড়াচড়া করে। যেমন- বায়ুনালীর আবরণী কলা এই জাতীয় হয় এবং তার জন্য ধূলা, ধােয়া প্রভৃতি বায়ুনালী দিয়ে প্রবেশ করতে পারে না অথবা বাধাপ্রাপ্ত হয়। ' 

২। জটিল আবরণী কলা (Compound Epithelium) এইগুলাের মধ্যে একটির বেশি কোষের (Cells) স্তর (Layer) থাকে। চর্ম (Skin) এর উপরের অংশে এই ধরনের কলা (Tissue) থাকে। 

৩। স্থানান্তরিত আবরণী কলা (Transitional Epithelium) ও এইগুলাে হলাে অনেক ধরনের কোষ (Cell) এর আস্তরণ। এদের উপরেরগুলাে চ্যাপ্টা, মাঝের গুলাে লম্বাটে ও নিচের স্মর বা Layer আরও লম্বাটে হয়। মূত্র - থলি বা Urinary Bladder, বৃক্ক বা Kidney প্রভৃতিতে এই জাতীয় কলা থাকে।


আৰণী লান্স (Epithelial Tissue) কাজ : 
> রক্ষা করা (Protection), 
নিঃসরণ করা (Secretion), 
> শােষণ করা (Absorption), 
> সংরক্ষণ করা (Storage), 
> নড়াচড়া করা (Movement), 
> পিচ্ছিল করা (Lubrication)। 

গ্রন্থি বা Gland হলাে নিঃসরণের যন্ত্র (Secretory Organ) যা দেহের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে। যেমন ঃ যকৃত (Liver), অগ্নাশয় (Pancreas), পিত্তথলি (Gall Bladder), পাকস্থলী (Stomach) প্রভৃতি। গ্রন্থিগুলাে বিভিন্ন স্থানে প্রয়ােজনীয় নানা রস নিঃসরণ করে। এই সব বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থির আকৃতি ও প্রকৃতি বিভিন্ন । গ্রন্থিগুলাে প্রধানত ২টি ভাগে ভাগ করা হয় ? 
     ১। নালীযুক্ত গ্রন্থি (Gland with duct) ঃ এগুলাে প্রত্যক্ষভাবে নালী দিয়ে নিঃসরণ পাঠিয়ে দেয়। যেমন :- লালা গ্রন্থি (Salivary Gland), যকৃত (Liver), অগ্নাশয় (Pancreas) প্রভৃতি। 

     ২। নালীবিহীন গ্রন্থি (Ductless Gland) ঃ এগুলাের কোন নালী নাই, এদের নিঃসরণ প্রত্যক্ষভাবে রক্তে মিশে বিরাট কাজ করে। যেমন ঃ পিটুইটারী (Pituitary), থাইরয়েড (Thyroid), এড্রিনাল (Adrenal) নিঃসরণের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে গ্রন্থিকে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ ১। শ্লেষ্ম গ্রন্থি বা Mucous Gland ঃ এইগুলাে শ্লেষ্ম জাতীয় পদার্থ নিঃসরণ করে। যেমনঃ- জিহ্বার নিচে সাবলিজুয়াল গ্রন্থি (sublingual Gland)। ২। সিরাস গ্রন্থি বা Serous Gland ঃ এগুলাে পাতলা জলীয় পদার্থ নিঃসরণ করে। | যেমন :- অগ্নাশয় (Pancreas), প্যারােটিড লালা গ্রন্থি (Parotid Salivary Gland)। 

      ৩। মিশ্র গ্রন্থি বা Mixed Gland ঃ এরা শ্লেষ্মা ও পাতলা জলীয় পদার্থ উভয়ই নিঃসরণ করে। • আবার ক্ষরণ পদ্ধতি ও ক্ষরণ নির্গমন নালীর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ভিত্তিতে গ্রন্থিগুলােকে দুই ভাগে। ভাগ করা যায়। যথা ঃ ১) বহিঃক্ষরা গ্রন্থি (Exocrine gland) এবং ২) অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি (Endocrine gland) । 

১। বহিঃক্ষরা গ্রন্থি (Exocrine gland) - যে সব গ্রন্থি  তাদের নিঃসৃত রাসায়নিক রস নালিকার মাধ্যমে উৎপত্তিস্থলের অদূরে বহন করে, সেগুলােকে বহিঃক্ষরা গ্রন্থি বলে। এদের নিঃসত পদার্থ রস বা জুস Juice) নামে পরিচিত। যেমন :- লালাগ্রন্থি, যকৃত, অগ্ন্যাশয় ইত্যাদি। 

২। অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি (Endocrine gland) - যে সব গ্রন্থি নালীবিহীন, তাদের ক্ষরণ সরাসরি রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে বাহিত হয়ে দূরবর্তী সুনির্দিষ্ট অঙ্গে ক্রিয়াশীল হয়, সে সব গ্রন্থিকে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বলে। যেমন ঃ পিটুইটারী, থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, এড্রেনাল প্রভৃতি গ্রন্থি।

পেশি কলা (Muscular Tissue): পেশি কলা সংকোচন-প্রসারণক্ষম ও অসংখ্য তর সমন্বয়ে গঠিত। পেশি কলার সাধারণ বৈশিষ্ট্য ঃ 
১। এই কলার কোষগুলাে লম্বা সূতার মত তাই এদের পেশি তম্ভও বলা হয়। 
২। কোষগুলাে সুস্পষ্ট নিউক্লিয়ার যুক্ত। 
৩। প্রতিটি কোষ সারকোলেমা (Sarcolemma) নামক ঝিল্লিতে আবৃত এবং এর ভেতরের সাইটোপ্লাজোমকে সারকোপ্লাজোম বলে। 
৪। সারকোপ্লাজোমের মধ্যে পরস্পর সমান্তরালভাবে অবস্থিত অসংখ্য মায়ােকাইব্রিল (Miofibril) নামক উপতত্ত্ব 
থাকে। 
৫। পেশি কলার প্রায় ৭৫ শতাংশ পানি ও অবশিষ্টাংশ কঠিন পদার্থে গঠিত। 

পেশি কলার কাজ : পেশি কলাই মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালনের জন্য দায়ী। অস্থি সংলগ্ন পেশির সংকোচন - প্রসারণের ফলে মানুষ চলাফেরা ও স্থানান্তরিত হতে পারে। 

পেশি কলার প্রকারভেদ : গঠন, অবস্থান ও কাজের উপর ভিত্তি করে পেশি কলাকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়: 
১) ঐচ্ছিক পেশি (Voluntary Muscle), 
২) অনৈচ্ছিক পেশি (Involuntary Muscle), 
৩) হৃদ পেশি (Heart Muscle)। 

১। রৈখিক ৰা ঐচ্ছিক পেশি (Voluntary or Striated Muscle) ঃ রৈখিক বা ঐচ্ছিক পেশির গায়ে দাগ দাগ (Striate) এবং ভাগ ভাগ (Stripe) থাকে। এগুলাে ইচ্ছার অধীনে কাজ করে। যেমন - হাতের পেশি, পায়ের পেশি।

২। মসৃণ বা অনৈচ্ছিক পেশি (involuntary or Non-striated Muscle) : মসৃণ বা অনৈচ্ছিক পেশির কোন দাগ বা ভাগ নেই। এগুলাে ইচ্ছায় পরিচালিত হয় না। এগুলি আপন মনে কাজ করে। যেমন - পৌষ্টিক নালী, শ্বাস নালী, রক্ত নালী, মূত্র থলি, জরায়, প্রভৃতি অঙ্গের গায়ে এ পেশি পাওয়া যায়। 

৩। হৃদ পেশী  (Cardiac Muscle):  গঠনের দিক থেকে এরা অনেকটা রৈখিক পেশির মতাে। এদের প্রকৃতি ও কাজ ভিন্ন ধরনের। হৃদ পেশির কার্যকারিতা ইচ্ছা নির্ভর নয়। এদের প্রতিটির সঙ্গে একটি শাখা দ্বারা যােগ থাকে। তার কারণ হলো, এদের কাজ কখনও বন্ধ হতে পারে না। যদি কয়েকটি পেশী অকর্মণ্য হয়, অন্য পেশিগুলাে তাদের চালিত তাই কাজের দিক থেকে এরা অনৈচ্ছিক। এইসব পেশির কাজ এইসব পেশি দ্বারাই সম্পাদিত হবে অন্য কোনভাবেই সম্পন্ন করা যাবে না। একমাত্র হৃদপিন্ডের প্রাচীরেই এ ধরনের পেশি কলা পাওয়া যায়। এদের একটি গুণ আছে। তা হলাে যথেষ্ট পরিমান উদ্দীপনা পেলে হৃদ পেশি তার সর্বচ্চ সাড়া দেয় কিন্তু উদ্দীপনা যথেষ্ট না হলে বিন্দু মাত্র সারা দেয় না। একে বলে 'All or none' law। শরীরের অন্য কোথাও এ ধরনের পেশি দেখা যায় না। 

যােজক কলা (Connective Tissue) : যােজক কলা দেহের গাঠনিক, যান্ত্রিক ও প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা পালনের পাশাপাশি অন্যান্য কলার সাথে সংযােগ স্থাপনের মাধ্যমে এদের পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

যােজক কলার প্রকারভেদ : যােজক কলাকে প্রাথমিকভাবে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন: 
১) প্রকৃত যােজক কলা (Proper Connective Tissue),
২) কঙ্কাল যােজক কলা (Skeletal Connective Tissue) ও 
৩) তরল যােজক কলা (Fluid Connective Tissue) ।

১| প্রকৃত যােজক কলা (Proper Connective Tissue) ঃ প্রকৃত যােজক কলার কোষগুলাে বিভিন্ন প্রকার তন এবং নিঃসৃত প্রচুর পরিমাণ ম্যাট্রিক্সে ছড়ানাে থাকে। পানি, শর্করা, আমিষ ও স্নেহ জাতীয় পদার্থের সমন্বয়ে এই কলা গঠিত। প্রকৃত যােজক কলা চার প্রকার ?

ক) এরিওলার যােজক কলা (Areolar Tissue) ঃ এই কলার ম্যাট্রিক্স জেলীর মত থক থকে। এতে বিভিন্ন প্রকার কোষ ও তুলতু থাকে। কোষগুলাের মধ্যে ফাইব্রোব্লাষ্ট, হিস্টিওসাইট, ম্যাক্রোফেজ কোষ, রঞ্জক কোষ, প্লাজমা কোষ ও মাষ্ট কোষ উল্লেখযােগ্য। ততুগুলাে দুই ধরনের; শ্বেত তন্তু ও পীত তুলতু। অবস্থান ও দেহ ত্বকের নিচে, পেশিসমূহের মধ্যবর্তী স্থানে, পাকস্থলী প্রভৃতি স্থানে এরিওলার কলা পরিলক্ষিত হয়।

এরিওলার যােজক কলার কাজঃ 
> ফাইব্রোব্লাষ্ট (Fibroblast) শ্বেত তন্তু উৎপাদনে সহায়তা করে এবং ক্ষতস্থান নিরাময়ে অংশগ্রহণ করে।
> রঞ্জক কোষ মেলানিন (Malanin) উৎপন্ন করে। 
> মাষ্ট কোষ হেপারিন (Heparin) উৎপন্ন করে।
> হিস্টিওসাইট জীবাণু গ্রাস করে।
> প্লাজমা কোষ এন্টিবডি তৈরি করে। 

খ) শ্বেত অঙ্ময় যােজক কলা (White Fibrous Tissue) ঃ এই কলার ম্যাট্রিক্সে শ্বেততমতু নামে শ্বেত বর্ণের এবং শাখাবিহীন ততু হুড়ানাে থাকে। এদের স্থিতিস্থাপকতা নেই। ফাইব্রোব্লাস্ট নামক কোষ থেকে এদের উৎপত্তি এবং কোলাজেন নামক প্রােটিনে এ কলা তৈরি হয়। অবস্থান: দেহত্বকের নিচে এবং অত্র প্রাচীরে একটি ধারাবাহিক ওর রূপে অবস্থান করে।

শ্বেত তন্ত্রময় যোজক কলার কাজ
> দেহের অস্থির সাথে পেশিকে যোগ করে।
> অস্থি বন্ধনী তৈরীতে সাহায্য করে।
> চাপ ও টানের হাত থেকে দেহের বিভিন্ন অঙ্গকে রক্ষা করে।

গ) পীত তন্ত্রময় যােজক কলা (Yellow Fibrous Tissue) এই কলার ম্যাট্রিক্সে পীত বর্ণের ও শাখাযুক্ত কতকগুলি তন্ত্র ছড়ানাে থাকে। এদের স্থিতিস্থাপকতা আছে, তাই এদের স্থিতিস্থাপক তন্ত্র ও বলা যায়। এইগুলি ইলাস্টিন (elastin) নামক প্রােটিনে গঠিত। অবস্থান : ফুসফুস, ধমনীর প্রাচীর, স্বর যন্ত্র ও সন্ধিবন্ধনীতে পাওয়া যায়।

পীত তন্ত্রময় যােজক কলার কাজ :
> রক্ত নালীকে স্থিতিস্থাপক করে।
> ফুসফুসের সংকোচন ও প্রসারণে অংশগ্রহণ করে শ্বাস কাজে সহায়তা করে।

ঘ) মেদ কলা (Adipose Tissue) এই কলার ম্যাট্রিক্সে অন্যান্য যােজক কলার তুলনায় কোষের সংখ্যা বেশি। এতে কিছু স্থিতিস্থাপক তল্প দেখা যায়।

অবস্থান ঃ মেদ কলা ত্বকের নিচে, স্তন গ্রন্থিতে, হলুদ অস্থি মজ্জাতে ও বৃক্কের চারদিকে বেশি পাওয়া যায়। মেদ কলার কাজ
> দেহের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করে।
> দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গকে রক্ষা করে। -
> দেহের সুষম আকৃতিদানে সাহায্য করে।
> দেহে শক্তির সঞ্চিত ভাণ্ডার রূপে কাজ করে ।


২। কঙ্কাল যােজক কলা (Skeletal Corinective Tissue) ঃ এই ধরনের যােজক কলা অর্ধকঠিন ও কঠিন দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমন - তরুণাস্থি এবং অস্থি।

ক) তরুণাস্থি (Cartilage) ঃ এই কলার ম্যাট্রিক্স কনড্রিন (Chondrin) নামক এক প্রকার কঠিন এবং স্থিতিস্থাপক পদার্থ দিয়ে তৈরি। তরুণাস্থির কোষকে কনড্রোসাইট (Condrocyte) বলে।

তরুণাথির কাজ:
> ম্যাট্রিক্সের গঠনের জন্য তরুণাস্থি অন্যান্য কলা অপেক্ষা অনেক বেশি চাপ ও টান (Tension) সহ্য করতে পারে।

তরুণাস্থির প্রকার ভেদ : ম্যাট্রিক্সের গঠনের উপর ভিত্তি করে তরুণাস্থিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় ।

i) স্বচ্ছ তরুণাস্থি (Hyaline Cartilage) ঃ এর ম্যাট্রিক্স ইষৎ স্বচ্ছ, নীলাভ, নমনীয় এবং তন্ত্রবিহীন।
অবস্থান : পকার তরুণাস্থি, শ্বাসনালীর তরুণাস্থি, নাক, বাড়ন্ত লম্বা অস্থির প্রান্তে এই স্বচ্ছ তরুণাস্থি থাকে।

ii) স্থিতিস্থাপক তরুণাস্থি (Elastic Cartilage) ঃ এর ম্যাট্রিক্স অস্বচ্ছ ও হালকা হলুদ বর্ণের, ম্যাটিক্সে স্থিতিস্থাপক তম্ভ ছড়ানাে থাকে।
অবস্থান : কর্ণছত্র বা পিনা (External Ear or Pina) ইউস্টেশীয়ান নালী (Eustetian Tube) প্রভৃতি অংশে এই ধরনের তরুণাস্থি থাকে।

iii) শত তময় তরুণাথি (White Fibrous Cartilage) ঃ এর ম্যাটিক্সে প্রচুর পরিমাণ শ্বেত তন্তু থাকে। অবস্থান : বিশেষ সন্ধিতে শ্বেত ততুময় তরুণাস্থি থাকে। যেমন:- দুটি কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থানে থাকে।


খ) অস্থি (Bone) ঃ অস্থি হচ্ছে দেহের সর্বাপেক্ষা সুদৃঢ় যােজক কলা। এর ম্যাট্রিক্স পানি (২৫%), জৈব পদার্থ (৩০%) ও অজৈব পদার্থ (৪৫%) দ্বারা গঠিত হওয়ায় সম্পূর্ণ কলাটি কঠিন আকার ধারণ করে। জৈব অংশটি কোলাজেন (Collagen) ও অস্টিওমিউকয়েডে (Osteouccid) গঠিত হয়। অজৈব অংশটি প্রধানত ক্যালসিয়াম ফসফেট ও ক্যালসিয়াম কার্বনেট নিয়ে গঠিত। ম্যাট্রিক্সে অস্থিকোষ (Osteocyte) ছড়ানাে থাকে। পেরিঅস্টিয়াম (Periosteum) নামক তম্ভময় যােজক কলা নির্মিত পাতলা ও মসৃণ আবরণ প্রতিটি অস্থিকে ঘিরে রাখে।

অস্থির গঠন : অস্থির ম্যাট্রিক্স কতকগুলি স্তরে সাজানাে থাকে। স্তরগুলিকে ল্যামেলী (Lamellae) বলে। ল্যামেলীগুলি একটি সুস্পষ্ট নালীর চারদিকে চক্রাকারে বিন্যস্ত। কেন্দ্রিয় এই নালীকে হ্যাভারসিয়ান নালী (Hayersian canal) বলে। প্রতিটি হ্যাভারসিয়ান নালী' ও একে বেষ্টনকারী ল্যামেলীগুলাের সমন্বয়ে একটি হ্যাভারসিয়ান তন্ত্র (Haversiar! system) সৃষ্টি হয়। প্রত্যেক ল্যামেলায় ল্যাকুনা নামে কতগুলাে ক্ষুদ্র গহবর অম্ভিকাম স্যাকুলার ভেতরে অবস্থান করে। প্রতিটি ল্যাকলার চারদিক থেকে সূক্ষ্ম কত গুলাে নালিকা বেরােয়। এদের ক্যানালিকুলি (Canaliculi) বলা হয়। এসব নালিকার মাধ্যমে একটি হ্যাভারসিয়ান তন্ত্রের বিভিন্ন ল্যাকুনা পরস্পরের সাথে যােগাযােগ রক্ষা করে। অস্থি মজ্জা : অস্থির কেন্দ্রস্থলে যে গহবর থাকে তার নাম মজ্জা গহর (Medullary cavity)। লম্বা অস্থির মজ্জা গহ্বরে এবং স্পঞ্জি অস্থির মধ্যে যে নরম, জেলি সদৃশ, উচ্চ রক্তবাহী নালী সমৃদ্ধ বস্তু থাকে তাকে অস্থি মজ্জা (Bone marrow) বলে। অস্থি মজ্জা দেহের বৃহত্তম অঙ্গগুলাের মধ্যে একটি এবং এর প্রধান কাজ রক্ত উৎপন্ন করা। অস্থি মজ্জা দুই ধরনের। যথা ঃ
১) লাল অস্থি মজ্জা (Red bone marrow),
২) হলুদ অস্থি মজ্জা (Yellow bone marrow)।

অস্থির প্রকারভেদঃ
ক) ঘনত্ব ও দৃঢ়তার ভিত্তিতে অস্থিকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন :
১। ঘনসন্নিবিষ্ট বা দৃঢ় অস্থি (Compact or Dense bone) ও আদর্শ লম্বা অস্থি' যেমন ফিমার ও হিউমেরাস এর অস্থিকাণ্ডে (Diaphysis) এ দৃঢ় অস্থি পাওয়া যায়।
২। স্পঞ্জ বা জালিকা সদৃশ অস্থি (Spongy or Cancellers bone) ও মাথার খুলি ও চ্যাপ্টা অস্থিগুলিতে এ ধরনের অস্থি পাওয়া যায়।

খ) আকার ও আকৃতির উপর ভিত্তি করে অস্থিকে ছয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন
১। লম্বা অস্থি (Long Bone),
২। খাট অস্থি (Short bone),
৩। চ্যাপ্টা অস্থি (Flat bone),
৪। অসম আকৃতির অস্থি (Irregular bone),
৫। বায়ু প্রকোষ্ঠ অস্থি (Pneurnatic bone),
৬। পেশী বন্ধনী থেকে উদ্ভূত ছােট অস্থি (Sesamoid bone)

১। লম্বা অস্থি (Long Bone): যেমন হিউমেরাস (Humerus), রেডিয়াস (Redius), আলনা (Una), ফিমার | (Femer), টিবিয়া (Tibia) এবং ফিবুলা (Fibula)।


২। খাট অস্থি (Short bone) ঃ যেমন হাত ও পায়ের ছােট ঘােট অস্থি কারপাল (Carpal) এবং টারসাল
(Tarsal) প্রভৃতি।

৩। চ্যাপ্টা অস্থি (Flat bone) ও যেমন স্ক্যাপুলা (Scapula), স্টারনাম (Sternum), পাজরের অস্থি বা রিব
(Rib)।

৪। অসম আকৃতির অস্থি (Irregular bone) ঃ যেমন- কশেরমকা (Vertebra)।

৫। বায়ু প্রকোষ্ঠ অস্থি (Pneumatic bone) ঃ যেমন- ম্যাক্সিলা (Maxilla), স্ফেনয়েড (Sphenoid) ও ইথময়েড (Ethmoid)।

৬। পেশি বন্ধনী থেকে উজুত ছােট অস্থি (Sesamoid bone) ঃ যেমন- প্যাটেল (Patella) ও ফিজিফর্ম
(Pisiform)


ক) সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন।
১। চিলা কাকে বলে? ২। কলা কত প্রকার ও কি কি?
৩। আবরণী কলা কাকে বলে?
৪। গ্রন্থি বলতে কি বােঝ?
৫।"পেশি কলা বলতে কি বােঝ?
৬। যােজক কলা বলতে কি বােঝ? উদাহরণ দাও।
৭। ঐচ্ছিক পেশি ও অনৈচ্ছিক পেশির মধ্যে পার্থক্য কি?
৮। তরুণাস্থি বলতে কী বােঝ?
৯। অস্থি কি?
১০। অস্থি মজ্জা কাকে বলে?

খ) রচনামূলক প্রশ্ন
১। আবরণী কলা কত প্রকার ও কি কি? তা উদাহরণসহ বর্ণনা কর।
২। পেশি কলা কত প্রকার ও কি কি? তা উদাহরণসহ বর্ণনা কর।
৩। যােজক কলার প্রকারভেদ, উদাহরণ ও কাজসহ বর্ণনা কর।
৪। তরুণাস্থির প্রকারভেদ, উদাহরণসহ আলােচনা কর।
৫। আকার ও আকৃতির উপর ভিত্তি করে অস্থিকে কয়টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়? উদাহরণসহ বর্ণনা কর।


Post a Comment

0 Comments