রাখালের বুদ্ধি -ভিনদেশি রুপকথা


এক দেশের মন্ত্রী একটা খুব বড় রকমের অপরাধ করেছিলেন। মন্ত্রী সে দেশের রাজার কাছে অনেক ক্ষমা চাইলেন, বললেন অমন ভুল আর কোনাে দিন করবেন না। তখন রাজা বললেন, “বেশ, তােমাকে ক্ষমা করব, যদি তুমি আমার তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পার। তােমাকে তিন মাস সময় দিচ্ছি। প্রথম প্রশ্ন : কত দিনে আমার মৃত্যু হবে, দ্বিতীয় প্রশ্ন : ঠিক কত সময়ে আমি সারা পৃথিবী ঘুরে আসতে পারব, তৃতীয় প্রশ্ন : যেদিন তুমি এইসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আমার কাছে আসবে সেদিন বলতে হবে সেই মুহূর্তে আমি কী ভাবছি, এবং তা যে ভুল তা প্রমাণ করতে হবে। প্রশ্ন শুনে মন্ত্রীর যেন মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল। দেশ-বিদেশের কত জ্ঞানী-গুণীর সঙ্গে দেখা করলেন, কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর পেলেন না। দিন যায়, দিনের পর মাস। তিন মাস পূর্ণ হতে যখন আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি, তখন এক রাখালের সঙ্গে তার দেখা হলাে। রাখাল তাে প্রথমে চিনতেই পারে নি তাকে,যখন 
চিনতে পারল, অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেল। বলল, এ কী মন্ত্রীমশাই, হায় হায়, আপনার এ কী চেহারা ০ হয়েছে? মন্ত্রীমশায়ের কাছে তার দুঃখের কাহিনী শুনল রাখাল। বলল, “ওঃ এই ব্যাপার? কিছু ভাববেন না ৪ মন্ত্রীমশাই, আমি আপনার সঙ্গে দেখা করব। আমার কথামতাে কাজ করবেন, দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।”

তিন মাস যেদিন শেষ হলাে, মন্ত্রীমশাইকে নিয়ে রাখাল গেল রাজসভায়- মন্ত্রীমশাই সেজেছেন রাখাল, আর রাখাল সেজেছে মন্ত্রীমশাই। মন্ত্রীকে দেখে রাজা হেসেই ফেললেন। বললেন, বাঃ মন্ত্রী, খাসা চেহারা বানিয়েছ তাে! আমার প্রশ্নের উত্তর প্রতুত? ‘হা মহারাজ, প্রস্তুত। আপনার প্রথম প্রশ্ন—আপনি ঠিক কতদিন বাঁচবেন। তার উত্তর হলাে, আপনি ঠিক ততদিনই বাঁচবেন যতদিন না আপনার শেষ নিশ্বাস পড়ছে, শেষ নিশ্বাস পড়ার আগে কোনােমতেই আপনার মৃত্যু হবে না। রাজা বললেন, ‘বাঃ মন্ত্রী, সাবাস! ঠিক উত্তর দিয়েছ। বেশ, এবার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দাও। ‘মহারাজ, আপনার প্রশ্ন হচ্ছে, সারা পৃথিবী ঘুরে আসতে আপনার কত সময় লাগবে। এর উত্তর হলাে, যদি আপনি সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের সঙ্গে সমান বেগে চলতে থাকেন তাহলে পরদিন সকালে সূর্য উঠার সময় পৃথিবী ঘুরে আসতে ঠিক চব্বিশ ঘণ্টা সময় লাগবে।' এ উত্তরও রাজার পছন্দ হলাে। তিনি বললেন, ‘বেশ,এবার শেষ প্রশ্ন। বলাে এই মুহূর্তে আমি কী ভাবছি, আর যা ভাবছি তা যে মিথ্যা তা প্রমাণ কর। উত্তরে মন্ত্রীবেশী রাখাল বলল, “মহারাজ, আপনি অবাক হয়ে ভাবছেন, আপনার অমন নাদুস-নুদুস মন্ত্রী কেমন করে এমন রােগাপটকা হয়ে গেল। রাজা বললেন, সত্যিই তাে, সে-কথাই তাে আমি ভাবছি। বেশ, এবার প্রমাণ কর যা ভাবছি তা ঠিক নয়! 

‘এই দেখুন প্রমাণ, মহারাজ।' এই বলে মন্ত্রীবেশী রাখাল এক টানে তার মন্ত্রীর পােশাক খুলে ফেলল। রাখালের পােশাক পরা মন্ত্রী কাঁচুমাচু হয়ে সভার এক কোণে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপছিলেন, ছদ্মবেশ খুলে ফেললেন তিনি। বললেন, ‘মহারাজ, দেখুন তাে, চিনতে পারেন কি আপনার মন্ত্রীকে? আসলে মন্ত্রী হলাম আমি, যাকে আপনি মন্ত্রী বলে মনে করেছিলেন সে নয়। মহারাজ যখন শুনলেন এই রাখালের বুদ্ধিতেই মন্ত্রীর প্রাণরক্ষা হলাে তখন তাকে অনেক ধনরত্ন দিলেন, আর মন্ত্রীর সব অপরাধ ক্ষমা করলেন। সারসংক্ষেপ এক দেশের এক মন্ত্রী বড় রকমের অপরাধ করেছিলেন। এতে ঐ দেশের রাজা তার উপর অত্যন্ত দ্রুদ্ধ হয়েছিলেন। মন্ত্রী রাজার কাছে ক্ষমা চেয়ে বললেন তিনি আর অমন ভুল করবেন না; তাকে যেন ক্ষমা করে দেওয়া হয়। রাজা মন্ত্রীকে শর্ত দিলেন, তিন মাসের মধ্যে তাঁর তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে তিনি মন্ত্রীকে ক্ষমা করে দেবেন। অনেকের সঙ্গে দেখা করেও মন্ত্রী প্রশ্নের উত্তর জানতে পারলেন না। শেষে এক রাখালের সাথে তার দেখা হলাে। রাখাল ছদ্মবেশে রাজদরবারে গিয়ে তার বুদ্ধি দিয়ে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিল। রাজা খুশি হয়ে মন্ত্রীকে ক্ষমা করলেন এবং রাখালকে অনেক ধনরত্ন উপহার দিলেন।। শব্দার্থ মন্ত্র - রাজার পরামর্শদাতা। কুদ্ধ - রাগান্বিত। ক্ষমা- দোষ বা অপরাধ মার্জনা । মুহূর্ত - নিমেষ। জ্ঞানী-বুদ্ধিমান। বুদ্ধি- ধীশক্তি, জানবার বা বুঝবার ক্ষমতা। গুণী - গুণবান, অভিজ্ঞ। রাখাল- যে গরু চরায়। খাসা – উত্তম, গুণবান, পছন্দসই। ছদ্মবেশ - আত্মপরিচয় গােপনার্থে পরিধেয় বেশ।

সৃজনশীল প্রশ্ন খলিফা হারুন-অর-রশীদের শাসনকাল। আলী কোজাই নামের এক ব্যক্তি তার বন্ধু নাজিমের কাছে একটি কলসির ভিতর জলপাইয়ের আড়ালে স্বর্ণমুদ্রা গচ্ছিত রেখে যায়। দুবছর পরে ফিরে এসে মুদ্রাগুলাের পরিবর্তে পেল টাটকা জলপাই। কাজীও বিচারটি করতে পারলেন না। খলিফা এক রাতে রাজ্যের মধ্যে ঘুরে বেড়ানাের সময় লক্ষ করলেন, এক কিশাের কাজী সেজে প্রমাণ করল, দুবছর জলপাই টাটকা থাকতে পারে না। খলিফার আদেশে নাজিম জলপাইয়ের পরিবর্তে আলী কোজাইকে স্বর্ণমুদ্রা ফেরত দিয়েছিল। 
ক. কে মন্ত্রীর অপরাধ ক্ষমা করেন? 
খ. মন্ত্রীর মাথায় বাজ ভেঙে পড়ার কারণটি বুঝিয়ে লেখ। 
গ. উদ্দীপকের নাজিমের সাথে রাখালের বুদ্ধি’ গল্পের মন্ত্রীর চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে তা বর্ণনা কর। 
ঘ. উদ্দীপকের কিশাের এবং রাখালের বুদ্ধি’ গল্পের রাখালের বুদ্ধির জোরেই আলী কোজাই ও মন্ত্রী বেঁচে গিয়েছিল।”- উক্তিটি সম্পর্কে তােমার মত ব্যক্ত কর। 

Post a Comment

0 Comments