মার্চেন্ট অব ভেনিস -উইলিয়াম শেক্সপিয়ার

ইতালির ভেনিস শহরে ছিল এক সওদাগর। নাম তার অ্যান্টনিও। সদা হাসিখুশি, বন্ধুবৎসল। বিপদ আপদে অভাবগ্রস্তরা ছুটে আসে তার কাছে। মুক্তহত অ্যান্টনিও কাউকেই শূন্যহাতে ফেরায় না। চারদিকে তার নামের প্রশংসা। 

কিন্তু অ্যান্টনিওর এই যশ প্রতিপত্তির ধাক্কা গিয়ে লাগে আর একটি অন্তরে। সেও একজন ব্যবসায়ী। তবে সুদের ব্যবসা করে। কাউকে বেকায়দায় পেলে চড়া সুদে টাকা ধার দেয়। ধার পরিশােধের সময় ঋণগ্রহীতাকে সর্বস্ব খােয়াতে হয়। ভেনিসের মানুষ তাই কেউ তাকে বরদাস্ত করতে পারত না। এই ব্যবসায়ীর নাম শাইলক। জাতে ইহুদি। অ্যান্টনিওকে সঙ্গত কারণেই সে দুচোখে দেখতে পারত না। অপরপক্ষে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী অ্যান্টনিও ঘৃণার চোখে দেখত তাকে। সে বিধর্মী বলে নয়। শাইলকের নীতি সম্পর্কে সে কধুমহলে মাঝে মধ্যে কঠোর ভাষায় সমালােচনাও করত। 

শাইলক সুচতুর ও অত্যন্ত কূটবুদ্ধিসম্পন্ন। সে অ্যান্টনিওর ব্যবসার লাভ-লােকসান আর নিজের সুদের ব্যবসা মূলত একই পর্যায়ে বিবেচনা করত। 

তবে অ্যান্টনিওর এই উদারনীতির জন্য শাইলকের সুদের ব্যবসার যে বহু ক্ষতি হচ্ছিল— একথা মর্মে মর্মে সে উপলব্ধি করতে পেরেছিল। সে মনেপ্রাণে অ্যান্টনিওর ধ্বংস কামনা করত। 

অ্যাস্টনিওর কপূর অভাব নেই। বন্ধুমহলের মধ্যে বাসানিও ছিল তার অন্তরঙ্গ। একদিন ম্লান মুখে এসে অ্যান্টনিওকে জানাল, পাের্শিয়া নামের একটি সুন্দরী যুবতীর বিয়ে হচ্ছে, বহু ধনরত্নের মালিক সে। আর তাকে সে পছন্দও করে। কিন্তু টাকাপয়সা না থাকার জন্য সে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারছে না।

অ্যান্টনিওর বাণিজ্য জাহাজগুলাে তখন সাগরবক্ষে ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে ফিরছে; এখনও সেগুলাে করে ফেরেনি; তাই সে কধুকে তখন অর্থ সাহায্য করতে পারল না। সেজন্য সে বলল, “অপেক্ষা করাে বন্ধু। বর্তমানে আমার হাতে নগদ কিছু নেই সত্য, তবে তােমার ইচ্ছা পূরণের জন্য আশীর্বাদ করছি।”

কিন্তু তাহলে যে সর্বনাশ হবে। বাসানিও মুষড়ে পড়ে, ‘জাহাজ বন্দরে পৌঁছেনি সে তত আমি জানি। কিন্তু টাকাটা যে এখনই দরকার। পাের্শিয়ার বিয়ে হয়ে গেলে তােমার টাকা আমার তাে কোনাে উপকার করতে পারবে না বন্ধু! 

অ্যান্টনিও বলল, “তাহলে কোনাে স্থান থেকে টাকাটা ধার নাও। আমি না হয় তােমার জামিন থাকব।

কিন্তু অত টাকা ধার দেবে কে? অনেক ভেবে বাসানিও শাইলকের দ্বারস্থ হলাে। বলল, ‘ধনী বণিক অ্যান্টনিও যদি আমার জামিন থাকে তবে কি আপনি আমাকে তিন হাজার ড্যাকাট ধার দিতে প্রস্তুত আছেন? আমি সুদ দিতে প্রতুত।”

অ্যান্টনিওর কথায় সুদখাের শাইলক তামাটে দাঁত বের করে হাসলেন। এই মােক্ষম সুযােগ। প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্টনিওকে ফাঁদে ফেলার আশায় মন তার চঞ্চল হয়ে উঠল। তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার আর কুৎসা রটানাের প্রতিশােধ গ্রহণের এ সুবর্ণ সুযোেগ উপেক্ষা করার যুক্তি সে খুঁজে পেল না।

একবাক্যে টাকা ধার দিতে সে রাজি হলাে। মুখে মধুর বুলি আওড়ে বলল, অ্যান্টনিও যখন নিজেই জামিন থাকছে তখন আর সুদ গ্রহণের কোনাে প্রশ্নই উঠে না। তবে কিনা একান্ত পরিহাসছলে একটা শর্ত লিখে দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ পরিশােধে ব্যর্থ হলে অ্যান্টনিওর শরীর হতে শাইলককে এক পাউন্ড মাংস কেটে দিতে হবে। 

সুদখাের বুড়াে শাইলকের কথায় বাসানিও চমকে উঠল। কিন্তু অ্যান্টনিও শুনে বলল, টাকাগুলাে খুব দরকার। আর তা ছাড়া বাণিজ্য জাহাজ ফিরে এলে এ অর্থসংকট তাে আর থাকছে না। তখন শাইলকের মনে কোনাে বদ মতলব থেকে থাকলেও সে ব্যর্থ হবে, সে মাংস কেন অ্যান্টনিওর কেশগ্রও স্পর্শ করতে পারবে না।

পাের্শিয়া প্রয়াত বাবার একমাত্র কন্যা। অসংখ্য ধনসম্পদ আর রূপলাবণ্যের জন্য বহু ডিউক ও রাজপুত্রদের নজরে পড়েছে সে। তার পাণিপ্রার্থী হয়ে তাই হাজার যুবকের ভিড়। কিন্তু বাবার নির্দেশমতাে পাের্শিয়া মাত্র তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে বেছে নিল। তার মধ্যে ভাগ্যবান বাসানিও ছিল।

বিয়ের শর্তানুযায়ী প্রাথমিক বাছাইকৃত যুবক তিনজনকে পৃথক পৃথকভাবে একটি সুসজ্জিত কক্ষে নিয়ে যাওয়া হলাে। সেখানে পাশাপাশি তিনটি পেটিকা ছিল। একটি সােনার আর একটি রুপার এবং সর্বশেষটি সিসার।। একটা পেটিকার মধ্যে ছিল পাের্শিয়ার নিজের ছবি। ছবিসহ পেটিকা যে নির্বাচন করতে পারবে সে-ই বিজয়ী হবে এবং পাের্শিয়ার সাথে অগাধ ধনরত্নের উত্তরাধিকারী হবে। এই ব্যাপারটি বাবার উপদেশ অনুযায়ীই স্থির করেছিল পাের্শিয়া। 

প্রথমে মরক্কোর রাজপুত্র ঘরের মধ্যে এলেন। পেটিকা তিনটির মধ্যে স্বর্ণেরটাই তিনি বাছাই করলেন। এর গায়ে কারুকার্যের সাথে খােদাই করা ছিল : যে আমাকে বাছাই করবে সে বতুগুণ বাঞ্ছিত ধন পাবে। কিন্তু খুলে দেখা গেল এতে পাের্শিয়ার ছবি নেই। পরিবর্তে আছে মড়ার মাথার খুলি আর উপদেশবাণী লেখা। একখানা চিরকুট। তাতে লেখা-

চকচক করিলেই সােনা নাহি হয়

বহু লোেক এ কথাটি শুনেছে নিশ্চয়,

বহু লােক লােতে করে জীবনের ক্ষয়

শুধু দেখে বাহিরের চাকচিক্যের জয়। 

মরক্কোর রাজকুমার মনে অফুরম্ভ হতাশা আর হাহাকার নিয়ে বিদায় হুলেন। এবার আরাগনের যুবরাজের পালা। তিনি রৌপ্য পেটিকা উত্তোলন করলেন। এই পেটিকার গায়ে খােদাই করা ছিল : আমাকে যে পছন্দ করবে সে তার প্রাপ্য পাবে। কিন্তু বাক্সটি খুলে তিনি হতাশ হলেন। দেখলেন পাের্শিয়ার ছবির পরিবর্তে ভিতরে রয়েছে একটা বােকার ছবি আর একখানা চিরকুট। তাতে লেখা- 

সাতবার রৌপ্য-পাত্র হয় অগ্নিদদ্ধ 

বারবার পােড় খেলে বুদ্ধি পরিশুদ্ধ 

আমি যা ঢাকা ছিনু রূপাের মায়ায় 

ফিরে যাও ঘরে তুমি, তােমাকে বিদায়। 

যুবরাজ লজ্জিত হয়ে ফিরে গেলেন। এবার বাসানিও। কম্পিত চোখে পেটিকা তিনটির গায়ের লেখা পড়লেন। দেখলেন, সিসার কৌটার গায়ে লেখা রয়েছে : আমাকে যে পছন্দ করবে তাকে তার যথাসর্বস্ব ঝুঁকি নিতে হবে। অনেক চিন্তা করে এই সাধারণ জৌলুশহীন পেটিকাই নির্বাচন করলেন তিনি। কম্পিত হতে ঢাকনা খুলতেই যুবতী পাের্শিয়ার হাসিমাখা ছবি পেলেন এবং একখানা চিরকুট, তাতে লেখা -

করােনি বাছাই তারে দেখে চেকনাই 

অনুকূল তব ভাগ্য সন্দেহ তাে নাই 

যবে হলাে করায় সৌভাগ্য তােমার 

এতেই তুষ্ট থেকো, চেয়াে নাকো আর। 

পাের্শিয়া তাকে স্বাগত জানাল। উভয়ের বিয়ে হয়ে গেল। 

এদিকে পাের্শিয়ার চাকরানি সুন্দরী নেরিসাকে দেখে বাসানিওর চাকর গ্রাসিয়ানাে মুগ্ধ হয়ে গেল। পাের্শিয়ার মধ্যস্থতায় তারাও দাম্পত্যজীবনে আবদ্ধ হয়ে পড়ল। 

কিন্তু এত সুখের মধ্যেও একটি মর্মন্তুদ দুর্ঘটনার খবর বয়ে আনল একখানা চিঠি। চিঠিখানা অ্যান্টনিও লিখেছে, তার সবগুলাে জাহাজ ঝড়ে সাগরবক্ষে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। শাইলক টাকার জন্য আদালতে নালিশ করেছে। চিঠি বহনকারী সালারিও আরও জানাল, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ইহুদি শয়তানটা টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ দলিলের শর্ত মােতাবেক ঋণ পরিশােধের সময়সীমা ইতিমধ্যেই উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এখন সে অ্যান্টনিওর গায়ের এক পাউন্ড মাস চায়। 

এর মধ্যে আরও এক ব্যাপার ঘটে গেছে। শাইলকের একমাত্র মেয়ে জেসিকা খ্রিস্টান যুবক লরেঞ্জোর কুমন্ত্রণায় পড়ে পালিয়ে গেছে। লরেঞ্জো অ্যান্টনিওর কস্তুপুত্র। তাই গােটা খ্রিস্টান জাতির উপর শাইলক এখন বীতশ্রদ্ধ । এখন আইনে যখন আটকানাে গেছে তখন অ্যান্টনিওকে ক্ষমার আর কোনাে প্রশ্নই উঠে না। 

খবরটিতে পাের্শিয়া হায় হায় করে উঠল এবং স্বামীই যে এসবের মূল-তাও জানতে পারল। দশগুণ অর্থ দিয়ে বাসানিওকে তাড়াতাড়ি ভেনিসের আদালতে পাঠাল সে। সেখানে বিচার হবে মহামতি অ্যান্টনিওর। 

স্বামীকে পাঠিয়ে বুদ্ধিমতী পাের্শিয়াও বসে থাকল না। পরিচারিকা নেরিসাকে সঙ্গে করে পুরুষের ছদ্মবেশে সেও ভেনিসের উদ্দেশে যাত্রা করল। 

আদালতে তখন বিচার শুরু হয়ে গেছে। বিচারক অ্যান্টনিওকে জিজ্ঞাসা করলেন,আপনার কোনাে উকিল আছে? 

অ্যান্টনিও সংক্ষেপে জবাব দিল, না ধর্মাবতার, আমার কোনাে উকিলের আবশ্যকতা নেই। 

অবশেষে বিচারক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, আপনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, আপনাকে এমন একজন পাষাণ হৃদয় মানুষ নামধারী জঘন্যতম জীবের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে, যার মধ্যে মানবিক করুণার সামান্যতম ছিটেফোঁটাও নেই। তারপর শাইলকের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি ইচ্ছে করলে অবশ্য তাকে ক্ষমা করতে পারেন। 

শাইলক ক্রুদ্ধস্বরে বলল, ‘ধর্মাবতার, এখানে ক্ষমার কোনাে প্রশ্নই উঠে না। আমি তাে চুক্তিনামার বাস্তবায়ন চাচ্ছি মাত্র। আপনি যদি আমার প্রাপ্য দিতে অস্বীকার করেন তাহলে বুঝব আইনের অপমৃত্যু ঘটেছে। বিচারক আর কোনাে কথা বললেন না। অ্যান্টনিও বলল, ‘ধর্মাবতার, আপনি আর আমার জন্য অপদস্থ হবেন না। আমি প্রস্তুত। 

খুশিতে শাইলকের চোখ চকচক করে উঠল। তার প্রাপ্য এক পাউন্ড মাংস পাবার জন্য সে জুতাের তলায় ছুরি শান দিতে লাগল। 

ঠিক এমন সময় এক পেয়াদা একখানা চিঠি এনে বিচারকের কাছে দিল। তাতে লেখা অ্যান্টনিওর এক বন্ধু একজন উকিল পাঠিয়েছেন। তিনি বাইরে অপেক্ষা করছেন; অ্যান্টনিওর পক্ষে কথা বলতে চান তিনি। 

বিচারকের অনুমতি পেয়ে এক তরুণ উকিল আদালতে প্রবেশ করলেন। কিন্তু উকিল সব শুনে মাংস কেটে।

নেবার পক্ষেই সমর্থন দিলেন। শুনে বাসানিও স্থান কাল পাত্র ভুলে আদালতের মধ্যেই কঁদতে শুরু করল। তার জন্যেই তাে আজ তার অকৃত্রিম কধু অ্যান্টনিওর এই অবস্থা। 

উকিল বললেন, মানবতার খাতিরে আইনকে বিসর্জন দেওয়া আমাদের উচিত নয়। আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা আবশ্যক। এবার আপনি মাংস কেটে নিন। আর অ্যান্টনিও, আপনিও শর্ত পালনের জন্য প্রস্তুত হন। 

অ্যান্টনিও আস্তে বললেন, আমি প্রস্তুত আছি। 

শাইলক মহাখুশি। তরুণ উকিলের আইনের প্রতি বিচক্ষণতা, আনুগত্য ইত্যাদির ভূয়সী প্রশংসা করে ছুরি উঁচু করে অ্যান্টনিওর দিকে সে এগিয়ে গেল। তরুণ উকিল বলল, অবশ্যই, আপনাকে ধন্যবাদ শাইলক। আপনিও আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল জেনে সুখি হলাম। কারণ দশগুণ টাকা অ্যান্টনিও পরিশােধ করতে চাইলেও আপনি তা গ্রহণ করেননি। 

“আপনি ঠিকই বলেছেন উকিল সাহেব। তোে হাসি হাসতে লাগল শাইলক। 

অ্যান্টনিওর পক্ষের উকিল বললেন, শর্তানুযায়ী আপনি এক পাউন্ড মাংস পাবেন-অবশ্যই সেটা পাবেন, কিন্তু দেখবেন যেন মাংস কেটে নেবার সময় তার কম বা বেশি না হয়। দ্বিতীয়ত সঙ্গে একবিন্দু রক্তও যেন না ঝরে। কারণ রক্তের কথা দলিলে লেখা নেই। 

বজ্রাহত পথিকের মতাে দাঁড়িয়ে রইল শাইলক। এ তাে সাংঘাতিক প্যাচ, রক্ত না ঝরলে মাংস নেবে কী করে। আর এক পাউন্ড মাংস মেপে কাটা কী সম্ভব? 

শাইলক থরথর করে কাঁপছে আর তরুণ উকিলের মুখে মৃদু মৃদু হাসি। উপায়ন্তর না দেখে শাইলক তাড়াতাড়ি বলল, আমি মাংস চাই না, আমার আসল টাকাটা চাই। 

বিচারক এবার কথা বললেন, অসম্ভব। আপনার বিরুদ্ধে এবার চার্জ হবে। একজন নাগরিককে হত্যার উদ্দেশ্যে আপনি বদ্ধপরিকর ছিলেন। এর শাস্তিস্বরূপ আপনার অর্ধেক সম্পত্তি অ্যান্টনিও পাবে, বাকি অর্ধেক সরকারি কোষাগারে জমা হবে। 

অ্যান্টনিও চমকে উঠল। বলল, না, ওর একটা কানাকড়িও আমি চাই না। আমার বন্ধুপুত্র লরেঞ্জো ওর মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। ও যদি স্বীকৃতি দেয় তবে তাদেরকে আমার অংশ আমি দান করে দিলাম। 

অগত্যা শাইলক তাতেই রাজি হলাে। 

বিচারকার্য শেষ হলাে। অ্যান্টনিও তরুণ উকিলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাবার জন্য এগিয়ে গেলেন। পারিশ্রমিকের কথা উঠলে তিনি বললেন কোনাে পারিশ্রমিক তিনি নেবেন না, তবে যদি একান্তই তিনি দিতে চান তবে তার। বন্ধু বাসানিওর আংটিটা উপহারস্বরূপ দিতে পারেন। 

আংটিটা আর এমন কী মূল্যবান। তবু বাসানিও তা দিতে ইতস্তত করছিল। কারণ আংটিটা ছিল নববধূ 

পাের্শিয়ার তরফের উপহার এবং এটা হস্তান্তর নিষিদ্ধ ছিল। তবু কধুর ব্যাপারে সে কী না দিতে পারে।

এর পরের ঘটনা অতি সংক্ষিপ্ত। বাসানিও ফিরে এলেন বেলমেন্ট শহরে পাের্শিয়ার কাছে। বাসানিওর হাতে আংটি না দেখে বিস্মিত হয়ে বাসানিওকে জিজ্ঞাসা করল, তােমার হাতে আমার দেওয়া উপহারটা কই? 

বাসানিও সব খুলে বলল। তারপর হাসিমুখে পাের্শিয়া একটা আংটি এনে তার হাতে পরিয়ে দিল। কিন্তু আটটা দেখে চমকাবার পালা ছিল বাসানিওর। কারণ এ সেই আংটি যেটা সে তরুণ উকিলকে উপহার দিয়ে এসেছিল। সে জানতে চাইল, ‘তুমি এটা কোথায় পেলে? তখন একটা উচ্চহাসির রােল পড়ে গেল। 

সার-সংক্ষেপ উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের চিরায়ত নাটকগুলাের অন্যতম বিখ্যাত একটি নাটক ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস। নাটকটিকে অতি সংক্ষেপে রূপান্তর করা এই গল্পটিতে সৎ ও অসৎ ব্যক্তির পরিণাম ফুটিয়ে তােলা হয়েছে। ইতালির ভেনিস শহরের সওদাগর অ্যান্টোনিও একজন সৎ, বন্ধুবৎসল ও ভালাে মানুষ হিসেবে সকলের কাছে প্রশংসিত। এই শহরের আর এক সওদাগর শাইলক। উচ্চহারে সুদে টাকা খাটানাে তার প্রধান ব্যবসা। টাকা ধার দেওয়ার সময় এমন সব শর্ত জুড়ে দেয় যাতে ঋণগ্রহীতা টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়। শহরের কেউ তাকে পছন্দ করে না। সে মনে মনে অ্যান্টোনিওর ধ্বংস কামনা করে। অ্যান্টোনিওর ঘনিষ্ট বন্ধু ব্যাসানিও। টাকা পয়সার অভাবে ধনীর দুলালী কন্যা পাের্শিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারছে না ব্যাসানিও! বন্ধুর ব্যথায় কাতর অ্যান্টোনিও ব্যাসানিওকে শাইলকের কাছে যে কোনাে শর্তে টাকা ধার নিতে বলেন। 

ব্যাসানিও টাকা ধার নেয় এবং যথাসময়ে পাের্শিয়াকে বিয়ে করে। এদিকে ধার নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার সময় পার হয়ে যাওয়ায় দুষ্টু শাইলক এক ফন্দি আটে। সে টাকার বদলে অ্যান্টোনিওর বুকের এক পাউন্ড মাংস চায় যা টাকা ধার নেওয়ার সময় শর্ত ছিল। স্বামীর উপকারী বন্ধুর এমন বিপদের কথা পাের্শিয়াকে বিচলিত করে। আদালতে যখন বিচারকার্য চলছে তখন এক তরুণ আইনজীবীর ছদ্মবেশে পাের্শিয়া যুক্তি তর্কে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে। এতে অ্যান্টোনিও মুক্তি পায় এবং শাইলককে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। গল্পটির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, সৎ উদ্দেশ্য চিরদিনই সফল হয় আর অসৎ উদ্দেশ্যের পরিণতি কখনাে ভালাে হয় না। 

সৃজনশীল প্রশ্ন ১. সােনাপুর গ্রামের ধনী ব্যবসায়ী ইমরান সাহেবের কাছে দরিদ্র জালাল মিয়া কন্যার বিয়ের জন্য কিছু সাহায্য চাইলে তিনি তাকে ৫০০০ টাকা দিলেন। প্রচণ্ড খরায় দিশেহারা কয়েকজন কৃষক তার কাছে কিছু ঋণ চাইলে বিনা শর্তে তাদের প্রত্যেককে ২০০০ টাকা করে দিলেন এবং সুবিধাজনক সময়ে ফেরত দিতে বললেন। অন্যদিকে মােড়ল জমির সাহেব অসহায় মানুষদের চড়া সুদে ঋণ দেন এবং সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে নেন। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে অনেকের জমি কেড়ে নেন। 

ক, ইহুদি ব্যবসায়ীর নাম কী? 

খ. এই ব্যবসায়ীর ব্যবসায়ের ধরন বর্ণনা কর। 

গ, মার্চেন্ট অব ভেনিস গল্পের অ্যান্টিনিও চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্য ইমরান সাহেবের মধ্যে লক্ষ করা যায়  তা ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. উদ্দীপকের জমির সাহেব ও গল্পের শাইলক মানবতার শত্রু’– বিশ্লেষণ কর। 

২. আলীবাবা ও কাশেম দুই ভাই। ঘটনাচক্রে আলীবাবা এক পাহাড়ে ডাকাত দলের অনেক সম্পত্তির সন্ধান পায়। কিন্তু সে লােভ সংবরণ করে অল্প কিছু সম্পদ নিয়ে ঘরে ফিরে আসে। তার ভাই কাশেম চালাকি করে ডাকাত দলের সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে আলীবাবার কাছ থেকে সেই স্থানের খবর জেনে নেয়। এরপর সম্পদ চুরি করতে গিয়ে ডাকাত দলের হাতে ধরা পড়ে ও মৃত্যুবরণ করে। 

ক, শাইলকের কীসের ব্যবসা ছিল? 

খ, বাসানিওকে ভাগ্যবান বলা হয়েছে কেন? 

গ. আলীবাবার সাথে মার্চেন্ট অব ভেনিস' গল্পের অ্যান্টনিওর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের যে মিল রয়েছে তা 

ব্যাখ্যা কর। 

ঘ. উদ্দীপক ও ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস' গল্পের মূলসুর একই- উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।