রিপভ্যান উইংকল -ফখরুজ্জামান চৌধুরী। [ ওয়াশিংটন আরভিং রচিত গল্প অবলম্বনে ]


হাডসন নদীর উপর দিয়ে জাহাজে করে যারা গেছে তাদের সবারই দৃষ্টি কেড়েছে ক্যাটুসকিল পাহাড়গুলাে। নদীর পশ্চিম দিকে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে এ পাহাড়শ্রেণি। এসব রূপকথার পাহাড়ের নিচে আছে এক গ্রাম। অনেক বছর আগে সে গ্রামে বাস করত একজন লােক; নাম তার রিপভ্যান উইংকল পরিবারের সদস্য বলে রিপভ্যান উইংকল নামেই সবার কাছে ছিল তার পরিচয়। গ্রামের সবাই তাকে খুব ভালােবাসত। ছেলেরা তাকে পথে দেখলেই আনন্দে চিৎকার করে উঠত। খেলাধুলার ব্যাপারে ছেলেদের সে খুব সাহায্য করত, তাদের খেলার জিনিস বানিয়ে দিত, ঘুড়ি ওড়ানাে শেখাত, মার্বেল খেলা শেখাত। রিপের এই আড্ডাবাজ মনােভাব গ্রামের অলস বন্ধুরা মেনে নিলেও তার স্ত্রী কিন্তু মেনে নিল না। নিজের কোনাে দোষ খুঁজে পায় না রিপ। দোষের মধ্যে শুধু সে কখনাে বিশেষ কাজ করত না। পরিশ্রম বা অধ্যবসায়ের ভয়ে কিন্তু সে অমন করত না। কারণ প্রায়ই সে এক টুকরাে ভিঙ্গে পাথরের উপর বসে থাকত। হাতে থাকত ইয়া বড় এক লাঠি। শান্তশিষ্টভাবে বসে বসে সে মাছ ধরত। কিন্তু ভুলেও কোনাে মাছ তার বড়শিতে ধরা পড়ত না। 

সে একটা ফঁাদ কাঁধে করে উঁচু পাহাড় আর বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াত কাঠবিড়ালি আর বুনাে কবুতর ধরার জন্য। পাড়াপড়শির সবচেয়ে কঠিন কাজটাও সে করে দিত। চেঁকিতে ধান ভানতে অথবা পাথরের প্রাচীর গড়তেও সে তাদের সাহায্য করত। এককথায় রিপভ্যান উইংকল অন্যের উপকার করে দেওয়ার জন্য সবসময় রাজি থাকত। রিপভ্যান উইংকলের ছেলেগুলাে খুব বজ্জাত হয়ে উঠল। বাপের ছন্নছাড়া ভাব তাদেরকে আরও অলস হবার জন্য সাহসী করে তুলল। রিপভ্যানের তবু জ্ঞান হলাে না। নিজেও সরল জীবনযাপন কামনা করে। পরিশ্রম করে টাকা রােজগারের চেয়ে উপােস থাকাই যেন শ্রেয়। রিপভ্যান উইংকল হেসে-খেলে জীবন কাটালেও তার স্ত্রী সবসময় আলসেমি আর অসাবধানতার জন্যে ঘ্যানঘ্যান করত। 

পরিবারটাকে সে ধ্বংস করছে বলেও তাকে সে গাল দিত। রিপ শুধু কাঁধ দুলিয়ে, মাথা উচিয়ে, চোখ কন্ধ করে কোনাে কথা না বলে তার জবাব দেয়। আর মাঝে মাঝে সে বাড়ির বাইরে চলে গিয়ে ঝগড়া লাগা ক করে? রিপের একমাত্র পােষা প্রাণী ছিল তার কুকুর উল। কুকুরটাও তার মনিবের মতােই রিপের স্ত্রীর কাছে অবজ্ঞা আর লাঞ্ছনা লাভ করত। স্ত্রী মনে করত, কুকুরটাই তার মনিবকে বেয়াড়া করে তুলেছে। কারণ কুকুরটাই ছিল রিপের একমাত্র ভ্রমণসঙ্গী। আর কুকুরটা যেন ভাবত, বেচারা রিপ, কত্রী তাের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে? আমি বেঁচে থাকতে তাের বন্ধুর অভাব হবে না। উলফ হয়তাে সমত হৃদয় দিয়ে মনিবের দুঃখ বােঝার চেষ্টা করত।

শরঙ্কালের একদিন। রিপ ক্যাটুসকিল পাহাড়ের একটা অংশে বসে ছিল। বসে বসে সে কাঠবিড়ালি শিকার করছিল। বন্দুকের শব্দ পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। ক্লান্ত হয়ে একসময় সে ঘাসের উপর শুয়ে পড়ল। রিপ দেখল, নিচে তরতর করে বয়ে চলেছে হাডসন নদী। নদীর বুকে পড়েছে বেগুনি রঙের ছায়া।

রিপ উঠে নিচে নামতে যাবে, এমন সময় হঠাৎ সে শুনতে পেল কে যেন তার নাম ধরে ডাকছে। চারদিকে তাকিয়ে সে কাউকে দেখতে পেল না। ভাবল, তার শােনার ভুল হতে পারে। কিন্তু আবারও শুনতে পেল সেই ডাক, ‘রিপভ্যান উইংকল। কুকুরটা ভয়ে ঘেউ ঘেউ করে উঠে মনিবের পাশে এসে দাঁড়াল। রিপের একটু ভয় হলাে। সে তাকিয়ে দেখল, অদ্ভুত একটা লােক পাথরের উপর দিয়ে হেঁটে আসছে। লােকটাকে রিপ চিনতে পারল না। হতে পারে কোনাে সাহায্যপ্রার্থী, তাই রিপ এগিয়ে গেল লােকটার কাছে। লােকটা সত্যি অদ্ভুত আকৃতির। 

মাথায় একঝাক ভারী চুল, মুখে কচকে দাড়ি। আর পােশাক পুরােনাে ওলন্দাজ ধাচের। কাপড়ের জামায় তার বুক ঢাকা। পরনে ব্রিচেস। ঢিলেঢালা ব্রিচেসের গায়ে বােম লাগানাে, আর হাঁটুর দিকটা বেশ উঁচু। কাঁধে তার মদ ভরা একটা ভান্ড। সে রিপের কাছে এসে বােঝা নিয়ে সাহায্য করতে ইশারা করল। বােঝা ভাগাভাগি করে তারা পাহাড় বেয়ে নেমে এল। রিপ শুনতে পেল পাহাড়ের মাঝে যেন বাজ ডাকছে। থমকে দাঁড়াল সে। কিন্তু সাহসে ভর করে আবার লােকটাকে অনুসরণ করল। ওরা কিছুক্ষণ পর উন্মুক্ত একটা খাদে এসে পৌছাল। উপরে গাছের ডালের ফাঁকে আকাশ আর মেঘ দেখা যায়। এতক্ষণ পর্যন্ত রিপ আর তার সঙ্গী কোনাে কথা না বলে পথ হাঁটছিল। লােকটা সম্বন্ধে রিপ নানা কথা ভাবতে লাগল।

উক্ত খাদে রিপ আরেকটা অদ্ভুত জিনিস দেখল। জায়গাটার মাঝখানে বসে কতগুলাে অদ্ভুত লােক কী যেন খেলছে। তাদের পােশাকও অদ্ভুত গােছের। তাদের কেউ পরেছে ছছাট্ট পাজামা, আবার কেউ পরেছে জামা। 

তাদের বেল্টের সাথে ছুরি ঝােলানাে। এদের প্রত্যেকে রিপের সাথির মতাে ব্রিচেস পরেছে। তাদের মুখও অদ্ভুত রকমের। কারও মাথা বড়, কারও মুখ বড়, আর শুয়ােরের মতাে ছােট ছােট চোখ। আবার কারও মুখ যেন নাকের সমান। মাথায় সাদা পাউরুটির মতাে হ্যাট, হাটে মােরগের ছােট্ট লাল পালক বসানাে। এদের রয়েছে ভিন্ন আকার আর রঙের দাড়ি। 

এদের মধ্যে যে সর্দার তাকে দেখলেই চেনা যায়। সে একজন বুড়াে মানুষ। রিপ দেখে অবাক হলাে, লােকগুলাে আমােদপ্রিয় হলেও কেমন যেন গল্পীর হয়ে বসে আছে। ওদের দেখে তারা পুতুলের মতাে তাকিয়ে রইল। রিপ কেমন যেন ভড়কে গেল। তার সঙ্গী এবার ভাণ্ডের মদ একটা পাত্রে ঢেলে ওকে বসতে বলল। ভয়ে ভয়ে আদেশ পালন করল রিপ। লােকগুলাে নীরবে মদ পান করে খেলতে শুরু করল। ধীরে ধীরে রিপের ভীতিভাব কেটে গেল। কেউ আর তার দিকে তাকিয়ে নেই দেখে সে সাহস করে মদ্য পানের কথা ভাবল। অনেকক্ষণ ধরে বেচারার তৃষ্ণা পেয়েছিল। ঢক ঢক্‌ করে সে মদ পান করতে লাগল, আর ধীরে ধীরে তার মাথা ভারী হয়ে এল, চোখ বন্ধ হয়ে এল। অবশেষে সে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম থেকে জেগে রিপ দেখল সে সবুজ উপত্যকায় শুয়ে আছে। এখানেই লােকটার সাথে তার প্রথম দেখা হয়েছিল। চোখ রগড়ে সে দেখল, সকাল হয়েছে। বনে বনে পাখি ডাকছে। ভােরের বাতাস বইছে! কিন্তু সেই লােকগুলাে আর নেই। 

স্ত্রীর কথা মনে পড়ে ভীত হলাে রিপ। বাইরে রাত কাটাবার কৈফিয়ত স্ত্রীকে সে কেমন করে দেবে। “ওহ বড় অন্যায় হয়ে গেছে এভাবে ঘুমিয়ে পড়াটা’- মনে মনে উচ্চারণ করল রিপ।। তার বন্দুকের খোঁজ করল সে। কিন্তু তার তেল-চকচকে পরিষ্কার কন্দুকটার পরিবর্তে সে দেখতে পেল ময়লা একটা কম্বুক পড়ে আছে। কন্দুকটার ললে মরচে ধরেছে, আর তার বঁট পােকায় খেয়ে ফেলেছে। এবার তার সন্দেহ হলাে, পাহাড়ের ভূতগুলাে তার সাথে এই চালাকি করেছে। তাকে মদ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে তার কন্দুকটা তারা চুরি করেছে। উফকেও ধারেকাছে কোথাও দেখা গেল না। তাড়াতাড়ি এ ভুতুড়ে পাহাড় থেকে বেরিয়ে আসতে চাইল রিপ। কিন্তু যাবার কোনাে পথ পেল না। পাথরগুলাে দেয়ালের মতােই পথের উপর দাঁড়িয়ে আছে। বেচারা রিপ শিস দিয়ে কুকুরটাকে ডাকল। তার ডাকের জবাব দিল মরা গাছে বসে থাকা কিছু কাক কা-কা করে। 

অবশেষে মরচে-ধরা কন্দুকটা সম্বল করেই পথ খুঁজতে লাগল রিপ। বহু কষ্টে সে বেরিয়ে এল। তাকে যে করেই হােক বাড়িতে ফিরতেই হবে। গ্রামের কাছে আসতে একদল লােকের সঙ্গে তার দেখা। আশ্চর্য, তাদের কাউকে সে চেনে না। অথচ গ্রামের সবাই তার কতই না পরিচিত। এদের কাপড়চোপড়ও একটু নতুন ধরনের। এ ধরনের পােশাকের সাথে তার পরিচয় নেই। লােকগুলাে তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, আর তাদের চিবুকে হাত বুলাচ্ছে। ওদের দেখাদেখি রিপও তাই করল, আর তখনই সে বুঝতে পারল তার চিবুকে ঝুলছে কয়েক ফুট লম্বা দাড়ি। এবার গ্রামে ঢুকল সে। একদল ছেলেমেয়ে তার পিছু পিছু দৌড়াতে শুরু করল। কুকুরগুলাে তার কাছ দিয়ে যাবার সময় ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে এল, যেন আজব এক চিড়িয়া দেখতে পেয়েছে তারা। 

রিপ অনুভব করল রাতারাতি গ্রামের পরিবেশ বদলে গেছে। নতুন ধাচের সব বাড়িঘর, লােকজনের সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু তা কী করে সম্ভব হলাে। দূরের পাহাড়, হাডসন নদী সবই তাে ঠিক আছে, পথ ভুলে অন্য গ্রামে ঢুকে পড়ার কোনাে প্রশ্নই উঠে না। গত রাতের মদের পাত্রটা তার এই অবস্থা করে ছেড়েছে। অতিকষ্টে পথ চিনে সে নিজের ঘরের দিকে যেতে লাগল। কিন্তু সে দেখল তার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, ছাদ ভেঙে পড়েছে, জানালা-দরজা সব ভেঙে একাকার। অর্ধাহারী একটা কুকুর বাড়ির আশেপাশে ঘুরছে। তাকে দেখতে অনেকটা উফের মতােই মনে হয়। রিপ তার নাম ধরে ডাকল। কিন্তু কুকুরটা দাঁত খিচিয়ে চলে গেল। 

ঘরের ভিতরে ঢুকল রিপ। স্ত্রী ডেম ভ্যান উইংকল আর তার ছেলেদের খোঁজ করল। কিন্তু কাউকে দেখতে না পেয়ে সত্যিই তার তয় হলাে। এবার সে দৌড়ে তার পুরােনাে আড্ডাখানা সরাইখানায় গেল। কিন্তু তারও কোনাে পাত্তা নেই। তার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে বিরাট একখানা কাঠের ঘর। ঘরটার দরজায় লেখা, “দি ইউনিয়ন হােটেল’! মালিক : জোনাথন ডুলিটল। লম্বা দাড়ি, মরচে ধরা কন্দুক আর একপাল ছেলেপিলেসহ রিপের দিকে হােটেলের সবারই দৃষ্টি পড়ল। তারা রিপকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরল। তারা সবাই রাজনীতি নিয়ে নানা প্রশ্ন করল রিপকে। কিন্তু সেসব কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারল না। রিপের কানের কাছে একজন মুখ এনে জিজ্ঞেস করল, রিপ ফেডারেল, না গণতন্ত্রী। এবারেও রিপের বােকা হবার পালা। একজন বিশিষ্ট এবং সবজান্তা লােক ভিড় ঠেলে রিপের কাছে এগিয়ে এল। মাথায় তার টুপি আর হাতে ছড়ি। সে এসে দুঙ্কার ছাড়ল কেন রিপ ভােটর সময় বন্দুক কঁাধে দলবল নিয়ে এসেছে এবং কেন সে। 

দাঙ্গা বাধাতে চায়? এবার লােকজন চিৎকার করে উঠল, এই লােকটা গুপ্তচর। উদ্বাস্তু। তাকে মার লাগাও।” বিশিষ্ট লােকটি অতিকষ্টে শান্তি রক্ষা করল। অচেনা অপরাধীর পরিচয় জানতে চাইল। বেচারা রিপ সবিনয়ে বলল যে, তাদের কোনাে ক্ষতি করবে না সে। সে এসেছিল তার প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নিতে। “ঠিক আছে তাদের নাম বলল। রিপ একটু থেমে বলল, ‘নিকোলাস ডেভার কোথায়? কতক্ষণ সবাই চুপ থাকার পর এক অতি বৃদ্ধ ব্যক্তি সরু গলায় জবাব দিল, সে তাে আঠারাে বছর আগে মারা গেছে। ‘ব্ৰম ডুচার কোথায়? ও সে তাে যুদ্ধ শুরু হতেই সৈন্যদলে যােগ দিয়ে চলে গেছে এবং মারাও গেছে বলে আমরা জেনেছি।” 

‘স্কুল মাস্টার ভ্যান বুশেল কোথায় ? * সেও যুদ্ধে গিয়েছিল। সেখানে সে বড় পদও পায়। এখন সে একজন কংগ্রেসি।” বন্ধুদের এরকম পরিবর্তন ও পৃথিবীতে তাকে একা দেখে রিপের হৃদয় দমে গেল। প্রতিটা উত্তর আর দৃশ্যই তাকে হতভম্ব করতে লাগল। এমতাবস্থায় হ্যাট পরা লােকটি আবার জিজ্ঞেস করল, কিন্তু তুমি কে? ‘খােদা জানেন’, রিপ কেঁদে উঠল, “আমি আর আমি নেই। আমি অন্য কেউ। তা না হলে এক রাতের ব্যবধানে কী এত পরিবর্তন আসে? আমি পাহাড়ে ঘুমিয়ে পড়ি। পাহাড়িরা আমার কন্দুক বদলে দিয়েছে। উপস্থিত লােকদের কেউ কেউ মাথা ঝাকাতে লাগল। 

একজন ছোঁ মেরে কন্দুকটা কেড়ে নিল। ছড়ি আর টুপিওয়ালা লােকটা গােলমাল আন্দাজ করে দ্রুত সরে পড়ল। ঠিক তখন ভিড় ঠেলে এগিয়ে এল ফিটফাট একজন মহিলা। ছাইরঙের বৃদ্ধ লােকটাকে সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। তার কোলে একটি শিশু। শিশুটা ভয় পেয়ে কাঁদতে শুরু করলে মহিলাটি বলল, এই রিপ থাম্‌, ও তােকে কিছু করবে না। শিশুটির নাম ও তার মায়ের কণ্ঠস্বর রিপের মনে পুরাতন স্মৃতি জাগিয়ে দিল। ‘তােমার নাম কী গাে ? জিজ্ঞেস করল সে। 

‘জুনিগ্ধ গার্ডনার। 

‘বাপের নাম? ‘আহা, তাঁর নাম ছিল রিপভ্যান উইংকল। কিন্তু আজ থেকে বিশ বছর আগে সেই যে তিনি কদুক নিয়ে বেরিয়ে গেলেন আর ফেরেননি। তার কুকুরটা একা একা ফিরে এসেছে। তিনি কি কদুক নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন, 

ইন্ডিয়ানরা তাকে মেরে ফেলেছেন, কেউ তা বলতে পারে না। তখন আমি এতটুকুন ছিলাম। রিপের তখন আর একটা কথা জিজ্ঞেস করা বাকি। ‘তােমার মা কোথায়? “আহা, তিনিও কদিন আগে মারা গেছেন। এবার রিপ আর নিজেকে সামলাতে পারল না। তার মেয়ে আর নাতিকে জড়িয়ে ধরে বলল, “আমি তােমার বাবা! একসময়ের যুবক রিপভ্যান উইংকল আজ হাড্ডিসার বুড়াে।” সবাই তাে একদম অবাক। ভিড় ঠেলে এক বুড়ি এসে ভুরুর উপর হাত রেখে বলল, “সত্যি! রিপভ্যান উইংকলই বটে। বুড়াে প্রতিবেশী, এসাে এসাে, বিশ বছর কোথায় ছিলে?” রিপ তার কাহিনী বলল। দীর্ঘ বিশ বছর তার কাছে এক রাত্রি মােটে! এমন তাজ্জব কথা কে শুনেছে কবে। 

পিটার হলাে এখানকার পুরােনাে অধিবাসী এবং এখানকার লােকদের সম্বন্ধে তার পুরাে জ্ঞান। সে রিপের কথাগুলাে বিশ্বাস করল; সে আরও বলল যে, তার বংশের ঐতিহাসিকগণ বলেছেন, ক্যাটসকিল পাহাড়ে অদ্ভুত ধরনের লােক সত্যি আছে। তারা নাকি উন্মুক্ত খাদে খেলা করে বেড়ায় এবং পাহাড়ের মধ্যে বাজের মতাে শব্দও শােনা যায়। রিপভ্যান উইংকল আর কিছুই নয়-সেই ঐতিহাসিকদের কথা প্রমাণ করে এল মাত্র।

সার-সংক্ষেপ ওয়াশিংটন আরভিং রচিত রিপভ্যান উইংকেল’একটি কল্পকাহিনীভিত্তিক উপন্যাস। যারা রহস্যগল্প পড়তে পছন্দ করে তাদের কাছে যুগ যুগ ধরে এটি সমাদৃত। যুক্তিগ্রাহ্য নয় এমন লেখা যারা পড়তে চায় না, তাদের কাছেও এই উপন্যাসটি অত্যন্ত প্রশংসিত। রিপভ্যান উইংকেল উপন্যাসটির সংক্ষিপ্ত আকারে গল্পে রূপায়ণ এই লেখাটি। গল্পে দেখা যায় রিপভ্যান একজন অলস প্রকৃতির মানুষ। বাস করত হাডসন নদীর তীরে ক্যাটসকিল পাহাড়ের পাদদেশে একটি ছােট গ্রামে। গ্রামের সবাই তাকে খুব ভালােবাসতাে। তবে সে বনে বনে ঘুরে বেড়াতে খুব পছন্দ করত। কাঠবিড়ালি আর কবুতর ধরার জন্য একটা ফাঁদ কাঁধে নিয়ে সে বনে বনে ঘুরে বেড়াত। এ বিষয়টি তার স্ত্রী মােটেই পছন্দ করত না। স্ত্রীর বকুনি থেকে বাঁচার জন্য একদিন সে তার পােষা কুকুর উল আর তার বন্দুক নিয়ে চলে যায় ক্যাটসকিল পাহাড়ের এক প্রান্তে। সেখানে সে একদল অচেনা অদ্ভুত রকমের লােকের দেখা পায়। তাদের দেওয়া এক ধরনের পানীয় পান করে সে ঘুমিয়ে পড়ে। সেই ঘুম ভাঙে বিশ বছর পর। যদিও তার কাছে মনে হয় মাত্র একটি রাত্রি। এত বছর পর গ্রামে ফিরে এসে সে নানা ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করে। বুড়ােরা ছাড়া কেউ তাকে চিনতে পারে না। ঘটে যায় নানা ধরনের মজার মজার ঘটনা। এইসব ঘটনা নিয়ে “রিপভ্যান উইংকেল’ গল্পটি পরিবেশিত হয়েছে অত্যন্ত সাবলিল ভাষায় যা শিক্ষার্থীরা পড়ে অনেক আনন্দ পাৰে। 

সৃজনশীল প্রশ্ন ১. প্রাকৃতিক দুর্যোগ সিডর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। উপকূলের বাসিন্দা আসমত আলী ঝড় ও প্রবল স্রোতের টানে ভেসে যান। উদ্ধারকারী দল তাকে তুলে নেয়। মাথায় আঘাতের কারণে তার কিছুই মনে থাকে না। অন্য দ্বীপে দীর্ঘদিন বসবাস করেন তিনি। পরবর্তীতে একজন সমাজকর্মী আসমতকে মানসিক রােগের হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন। চিকিৎসায় ধীরে ধীরে আসমত ভালাে হয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। এলাকার কোনাে মানুষজন, রাস্তাঘাট ঠিকমতাে চিনতে না পারলেও আসমতকে ফিরে পেয়ে বাড়ির সবাই আনন্দে আত্মহারা। 
ক, রিপভ্যান উইংকলের স্ত্রী সবসময় ঘ্যান ঘ্যান করত কেন? 
খ, রিপ নিজের কোনাে দোষ খুঁজে পায় না কেন? 
গ. উদ্দীপকের আসমত আলীর সাথে রিপভ্যান উইংকল গল্পের রিপের যে সাদৃশ্য রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের আসমত আলী ও রিপের হারিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপট ভিন্ন মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর। 

২. ছােটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেছেন রিপন সাহেব। কোনাে কাজকেই তিনি ছােট মনে করেননি, যখন যেখানে সুযােগ পেয়েছেন তখনই তা আগ্রহ নিয়ে করেছেন। ভাগ্যান্বষণে তিনি বউ ও মেয়েকে বাড়িতে রেখে মালয়েশিয়া চলে যান। দুই বছর চাকরি করার পর সহকর্মীর চক্রান্তে তিনি মামলাতে জড়িয়ে পড়েন। চৌদ্দ বছর জেল খেটে তিনি বহুকষ্টে দেশে ফিরে আসেন। ততােদিনে তার মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। বাড়ির লােকজন রিপনকে পেয়ে খুশি হন। 
ক. রিপের পােষ্য প্রাণীর নাম কী? 
খ. রিপ ঘুমিয়ে গিয়েছিল কেন? বর্ণনা কর। 
গ. উদ্দীপকের রিপন ও “রিপভ্যান উইংকল’ গল্পের রিপের স্বভাবগত দিক ছিল ভিন্ন- ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. পরিণতিতে মিল থাকলেও উদ্দীপকটি রিপভ্যান উইংকল গল্পের পুরাে বিষয়টি ধারণ করে না যুক্তিসহ ব্যাখ্যা কর। 

Post a Comment

0 Comments