শিক্ষাগুরুর মর্যাদা -অজীফাঁদেয় শঙ্ক্ষা


বাদশাহ আলমগীর
কুমালে তাহার পড়াইত এক মৌলবি দিল্লির।
একদা প্রভাতে গিয়া
দেখেন বাদশাহ-শাহজাদা এক পাত্র হৱে নিয়া
ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে
পুলকিত হ্রদে আনত অল্পলে,
শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধুলি
ধুয়ে-মুছে সৰ করিছেন সাফ সঞ্চারী আঙ্গুলী।


শিক্ষক মৌলবি
ভাবিলেন, আর্জি নিস্থর নাহি যায় লুৰি ভঁৰ সবি।
দিলিপতিৰ পুত্রের করে
লইয়াছে পানি চমণের পরে,
স্পর্ধার কাজ, হন অপরাধ করেছে— কোন কালে!
ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার ক্লেখা দেখা দিল তার ভালে।


হঠাৎ কী তাৰি উঠি
কহিলেন, আমি করি নাক, যায় যাবে শির টুটি,
শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার
দিল্লির পতি সে তো কোন ছার,
ভয় করি নাক, ধরি নাক ধার, মনে আছে মোর বল,
বাদশাহ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাৰ অনর্গল।

যায় যাবে প্রাণ তাহে,
প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি শুনাব শাহানশাহে।

তার পরদিন প্রাতে
বাদশা দূত শিক্ষকে ডেকে নিয়ে গেল কেল্লাতে।
খাস কামরাতে যৰে।
শিক্ষকে ডাকি বাদশাহ কহেন, শুনুন জনাৰ অৰে,
পুত্র আমার আপনার কাছে
লৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে?
বরং শিখেছে বেয়াদবি আর পুজনে অবহেলা,
নহিলে সেদিন দেখিলাম যাহা স্বয়ং সকাল বেলা।

শিক্ষকে কন— “জাহাপনা, আমি বুঝিতে পারি নি, হায়,
কী কী বলিতে আজিকে আমায় ডেকেছে নিরালায় |
বাদশাহ কহেন, 'সেদিন প্রভাতে
দেখিলাম আমি দাড়ায় তফাতে

নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,
পুত্র আমার জল চালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ।
নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে
ধুয়ে দিল না কেন সে চর, বড় ব্যথা পাই মনে।

উস ভরি শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে,
কুর্ণিশ করি বদিশাহে তবে কহেন উচ্চরবে-
আজ হতে চির উন্নত হলােশিক্ষাগুরু শিল্প
সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ আলমগীর।

কবিতার মূলভাব জেনে নিই।
‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা' কবিতায় শিক্ষকের মর্যাদার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কবিতায় শিক্ষক একজন সাধারণ মানুষ হওয়া সত্ত্বেও বাদশাহ আলমগীরের ছেলের দ্বারা পায়ে পানি ঢেলে নিয়েছিলেন। কিন্তু বাদশাহ আলমগীর এতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। বাদশাহ আলমগীর প্রত্যাশা। করেছিলেন তার সন্তান পানি ঢেলে নিজ হাতে শিক্ষকের পা ধুয়ে দেবেন। তবেই না তার সন্তান নৈতিকতা, মূল্যবোেধ ও দেশপ্রেম নিয়ে দেশের একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। বাদশাহ আলমগীর উপলব্ধি করেছিলেন, যে ছাত্র তাঁর শিক্ষককে যথাযথ মর্যাদা দিতে জানে , শিক্ষকের সেবা করতে জানে না, সে কখনাে পরিবার, সমাজ ও দেশের উপযােগী মানুষ হিসাবে গড়ে উঠতে পারে না।। শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতার মাধ্যমে আমরা উপলদ্ধি করতে পারি, শিক্ষা হলাে একটি জাতির মেরুদণ্ড, আর শিক্ষক হলেন কাণ্ডারি। তিল তিল করে নীরবে নিভৃতে শিক্ষক তাঁর আদর্শ দ্বারা জাতীয় আকাঙ্ক্ষার উপযােগী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তােলেন। সমাজ ও দেশের জন্য শিক্ষকের  অবদান অপরিসীম। তাই সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা সবার উপরে।

কৰি-পরিচিতি  কবি কাজী কাদের নওয়াজ ১৯০৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার তালিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও বিটি পাশ করেন। তিনি চাকরি জীবনের প্রথমে ছিলেন সাব ইন্সপেক্টর, পরে বিভিন্ন স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নীতিকথা ও কাহিনিমূলক শিশুতােষ কবিতার জন্য খ্যাতি লাভ করেন। ১৯৮৩ সালের ৩রা জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Post a Comment

0 Comments